বাংলা সাহিত্যে ‘দর্পণ’ নামাঙ্কিত কিছু রচনা
বাংলা সাহিত্যে ‘নীলদর্পণ’ নাটকের প্রভাব যে কতখানি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বলা যেতে পারে এই নাটকের প্রভাবপুষ্ট হয়ে সমকালীন বা তার পরে অনেক সাহিত্যিক ‘দর্পণ’ নামাঙ্কিত নানা রচনা সৃষ্টি করেছেন। আজ আমাদের এই পোস্টে বাংলা সাহিত্যে ‘দর্পণ’ নামাঙ্কিত কিছু রচনা -এর পরিচিতি তুলে ধরব। হয়তো পাঠক পাঠিকা নতুন কোনো তথ্য পেতে পারেন। পোস্টটি কেমন লাগল তা কমেন্টে জানাবেন। নতুন কোনো তথ্য সংযোজনের প্রয়োজন হলে তাও জানাবেন।
বাংলা সাহিত্যে ‘দর্পণ’ নামাঙ্কিত কিছু রচনা
১] নীলদর্পণ (১৮৬০) নাটক, দীনবন্ধু মিত্র। বাংলায় নীলচাষীদের উপর নীলকর সাহেবদের অকথ্য অত্যাচার এবং তার কুফলের উপর ভিত্তি করে রচিত নাটক। অঙ্ক সংখ্যা ৫। চরিত্রগুলি হল গোলোক বসু, নবীনমাধব, সাবিত্রী, সৈরিন্ধ্রী, ক্ষেত্রমণি, সাধুচরণ, পি পি রোগ।
২] জমিদার দর্পণ (১৮৭৩) নাটক, মীর মোশারেফ হোসেন। জমিদার সমাজের নিষ্ঠুরতা, তাদের অত্যাচার এই নাটকের মূল বিষয়। অঙ্ক সংখ্যা ৩। মূল চরিত্রগুলি হল আবু মোল্লা, নূরনেহার, হাওয়ান আলী।
৩] কেরাণী দর্পণ (১৮৭৪) নাটক, যোগেন্দ্রনাথ ঘোষ। নাটকে সমকালীন কলকাতার কেরানী জীবনের বাস্তব চিত্র পরিবেশিত হয়েছে। নাটকটি ন্যাশনাল থিয়েটারে অভিনীত হয়েছিল।
৪] চা-কর দর্পণ (১৮৭৫) নাটক, দক্ষিণারঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। নাটকে চা বাগানের কর্মীদের উপর চা-কুঠীর শ্বেতাঙ্গ কর্তাদের অত্যাচার দেখানো হয়েছে। নাটকে দীনবন্ধুর নীলদর্পণ নাটকের প্রভাব আছে।
৫] জেল দর্পণ (১৮৭৫) নাটক, দক্ষিণারঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। নাটকে জেলের কয়েদীদের উপর অত্যাচারের চিত্র পরিবেশিত হয়েছে।
আরও পড়ুন
৬] সাক্ষাৎ দর্পণ নাটক (১৮৭১) নাটক, নাট্যকারের নাম জানা যায় না। তবে নাটকটি ন্যাশনাল থিয়েটারে ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে অভিনীত হয়েছিল। উৎসর্গ করা হয়েছে বাবু বিহারীলাল গুপ্তকে।
৭] মারাঠা দর্পণ (তর্পণ ? আনু. ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ বা তার পূর্বে) নাটক, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। রচনাটির কোনো পান্ডুলিপি পাওয়া যায় না। লেখক তা পুড়িয়ে দেন।
৮] ঋতুদর্পণ (১৮৬৪) কাব্য, গণেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। কাব্যে সমকালীন কলকাতার সাহেবি ভাবাপন্ন মানুষদের প্রতি আছে কটাক্ষ। ড. সুকুমার সেন এই কাব্যে ঈশ্বরগুপ্তের প্রভাব লক্ষ্য করেছেন।
৯] ‘দর্পণ’ (১৯৪৫) উপন্যাস, মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়। সাহিত্যের রূপরীতির বিচারে রাজনৈতিক উপন্যাস। উপন্যাসে শোষিত চাষি সম্প্রদায়ের কথা, সংগ্রামী শ্রমিক, আদিবাসী মজুর এবং কমিউনিস্ট নেতৃত্বাধীন কৃষক মজুরের লড়াইয়ের কাহিনি আছে। উল্লেখযোগ্য চরিত্রগুলি হল লোকনাথ, কৃষ্ণেন্দু, বীরেশ্বর, রম্ভা।
১০] ‘হুজুর দর্পণ’ (১৯৬০) যার সম্বন্ধে লেখিকা প্রতিভা বিশ্বাসের বক্তব্য “উনিশ শতকের বাঙলায় যারা কোনো না কোনো ভাবে হুজুর হয়েছিলেন, সেই সব সরকারী, আধাসরকারী, বেসরকারী প্রভুদের কর্মকান্ডের ইতিবৃত্ত এই ‘হুজুর দর্পণ’ গ্রন্থ।”
১১] কলিকাতা দর্পণ (?) প্রবন্ধগ্রন্থ, রাধারমণ মিত্র। গ্রন্থটি ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরষ্কার পায়।
১২] টাইটেল দর্পন (১৮৯৪) প্রিয়নাথ পালিত, বস্তুত এটি একটি প্রহসন। এই প্রহসনে সরকারি খেতাব লোভী জমিদারদের চিত্রকে তুলে ধরা হয়েছে।
১৩] ভোটদর্পণ (১৯৫২) উপন্যাস, সমরেশ বসু। গ্রন্থাকারে প্রকাশের পূর্বে রচনাটি ‘প্রবাহ’ নামক পত্রিকায় এই বছরে ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। কাহিনি শুরু ৩০শে ডিসেম্বরে আর সমাপ্তি ১ জানুয়ারি। ভোটের আবহে একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক ছবিকে চিত্রিত করা হয়েছে এই উপন্যাসে।
১৪] মনোদর্পণ (১৯৩১) কাব্য, সজনীকান্ত দাস। কাব্যের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতা হল ‘ব্যাঙ’, ‘রাজার হুকুমে পথে পথে তারা’, ‘ভাষা ও ছন্দ’, ‘পুরষ্কার’।
এছাড়া ঢাকাদর্পণ (১৮৬১) কাব্য, হরিশচন্দ্র মিত্র, পল্লীগ্রাম দর্পণ (১৮৭৩) নাটক, প্রসন্নচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ভারত দর্পণ (১৮৭২) প্রিয়লাল দত্ত, গৃহ দর্পণ (১৮৮৭) কালীকুমার মুখোপাধ্যায়, মিউনিসিপ্যাল দর্পণ (১৮৯২) সুন্দরীমোহন দাস, দর্পণ (১৯৬০) সলিল সেন, নির্জন দর্পণ (১৯৮৪, উপন্যাস, বীরেন্দ্র দত্ত), চিঠির দর্পণে’ লিখেছেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়।