কাব্য সাহিত্যের রূপ ও রীতি
কাব্য সাহিত্যের রূপ ও রীতি বিচারে কাব্য বা কবিতাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় মন্ময় বা গীতি কবিতা এবং তন্ময় বা বস্তুনিষ্ঠ কবিতা। গঠনশৈলী ও বিভিন্ন শ্রেণী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আছে এখানে।
মন্ময় বা গীতি কবিতা
যে কবিতায় কবি তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত আবেগ অনুভূতিকে এক সাবলীল ও আন্তরিক গীতিপ্রবন ভাষায় ব্যক্ত করেন তাই গীতি কবিতা বা lyric। এই ‘লিরিক’ শব্দটির উদ্ভব গ্রিক lyre শব্দ থেকে। যার অর্থ বীণা।
গীতি কবিতার ভাগ গুলি নিম্নরুপ:- ওড/স্তোত্রকবিতা, ব্যালাড/গাথাকবিতা, এলিজি/শোককবিতা, সনেট/চতুর্দশপদী কবিতা, রাখালিয়া কবিতা, হাইকু, লিমেরিক/রঁদো/ট্রায়োলেট ইত্যাদি।
ওড প্রাচীন গ্রিসে ধর্মীয় ও সামাজিক আচার অনুষ্ঠান উপলক্ষে সঙ্গীত নৃত্য সহযোগে গাওয়া হত যে সব স্তুতিমূলক গান তা হল ওড। pindar এই গান গুলি রচনা করে ছিলেন।গান গুলি Epode এর জটিল ত্রিস্তর ছকে বিন্যস্ত। বাংলায় কিছু ওড হল অক্ষয় কুমার বড়ালের ‘মানব বন্দনা’ রবীন্দ্রনাথের ‘বর্ষশেষ’ ইত্যাদি।
এলিজি/শোক কবিতা শোক কবিতা বলতে এমন রচনাকে বুঝি যে রচনায় কবির ব্যক্তিগত শোকানুভূতি অথবা বৃহত্তর সমষ্টিগত শোক কাহিনীকে। যেমন বিহারীলাল চক্রবর্তীর ‘বন্ধু-বিয়োগ।
সনেট সমদৈর্ঘ্যের চোদ্দটি পংক্তিতে ও একটি বিশেষ ছন্দ রীতিতে যখন কবি মনের একটি অখন্ড ভাবকল্পনা কাব্যরুপ লাভ করে তাকে সনেট বলে।সনেট ইতালিও শব্দ যার অর্থ মৃদুধ্বনি পেত্রার্ক এর জন্ম দেন।বাংলায় মধুসূদন দত্ত। এর দুটি অংশ অষ্টক ও ষটক।
ব্যালাড ইতালিও ভাষায় ballare শব্দের অর্থ নৃত্য তা থেকেই ফারসি ভাষার মাধ্যমে ইংরাজিতে ballad শব্দটি গৃহীত হয়েছে।গাথাকবিতা হল প্রাচীন লোক সংস্কৃতি। যেমন – ময়মনসিংহ গীতিকা, গোপিচন্দ্রের গান ইত্যাদি।
হাইকু ষোড়শ শতকে জাপানে তিন পংক্তির এক অতি সংখিপ্ত কবিতার উদ্ভব হয়েছিল যায নাম হাইকু।
তন্ময়/বস্তুনিষ্ঠ কবিতা
শ্রেণী বিভাগ গুলি হল যথাক্রমে :- মহাকাব্য, রুপক, ব্যঙ্গকবিতা লিপিকবিতা, নাটকীয় একোক্তি, রোমান্স কাব্য, নীতিকবিতা ইত্যাদি।
মহাকাব্য পৌরানিক বা ঐতিহাসিক আখ্যানবস্তু অবলম্বনে, ভাষার ওজস্বিতায়, আয়তনে, শৌর্য-বীর্য মহত্বের যে মহাকায় বর্ণনাত্মক উপখ্যান তাই হল মহাকাব্য।গ্রিক epic শব্দ থেকে এর উদ্ভব। যেমন- রামায়ন , মহাভারত
লক্ষন:- ক , মহাকাব্যের নায়ক ধীরোদাত্তগুনসমন্বিত – কোন দেবতা , রাজা , উচ্চবংশজাত
খ,কমপক্ষে 9 টি ও সর্বাধিক 30 টি সর্গ থাকবে।
গ, পটভূমি হবে স্বর্গ মর্ত্য পাতাল প্রসারি
ঘ,ভাষা হবে ওজস্বী ও গাম্ভীর্যপূর্ণ
ঙ, শৃঙ্গার, বীর, ও শান্তরসের একটি হবে প্রধান।অন্যগুলি প্রধান রসের অঙ্গীরস।
রুপক কবিতা যে কাব্য কাহিনীর উপরতলের আপাত অর্থের অন্তরালে একটি গূঢ় বা বাঞ্জনার ইঙ্গিত থাকে তাকে রুপক কবিতা বলে।ফারসি allegorie & গ্রিক allegoria র অর্থ হল ‘speaking in another way’ অর্থৎ ‘ অন্যভাবে বলা’ । যেমন রবীন্দ্র নাথের ‘কৃপণ।
ব্যঙ্গকবিতা ল্যাটিন satira বা satura থেকে এসেছে satire শব্দটি।হাসি-কন্না , আমোদ-কৌতুকের কবিতা। যেমন – রবীন্দ্রনাথের হিং টিং ছট।
লিখেছেন – দীপক ঘোষ, বাংলা শিক্ষক, বারুইপুর, দঃ ২৪ পরগণা