
ভারতচন্দ্র রায় – গুণাকর
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের ধারায় মঙ্গলকাব্য এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। মধ্যযুগের শেষ লগ্নে ও আধুনিক যুগের সূচনায় যে কবি সেতু বন্ধন রচনা করেছেন তিনি আর কেউ না, ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর কবি। আমাদের এই পোস্টে উক্ত কবির নানা তথ্য পরিবেশিত হয়েছে।
ভারতচন্দ্র রায় – পরিচিতি
কবি ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর হলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মার্জিত রুচির বিদগ্ধ পণ্ডিত। তাঁর জন্মতারিখ নিয়ে পণ্ডিত মহলে নানান বিতর্ক দেখা যায়। তবে মনে করা হয় ভারতচন্দ্র বর্ধমানের (মতান্তরে হাওড়া) ভুরসুট পরগনার পেঁড়ো বসন্তপুর গ্রামে আনুমানিক ১৭১২ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ফুলিয়ার মুখটী ও নৃসিংহের বংশের সন্তান। কবির পিতা ছিলেন রাজা নরেন্দ্রনারায়ণ রায়। তিনি ছিলেন জমিদার।
পূর্বপুরুষ
বর্ধমান রাজের সঙ্গে বিবাদের ফলে নরেন্দ্র রায় সব কিছু হারান। তখন কবি ভারতচন্দ্র “নাওয়াপাড়া” গ্রামে আশ্রয় গ্রহণ করেন। কবির শিক্ষা পর্ব শুরু হয় এখানেই। তিনি সেখানে টোলে সংস্কৃত চর্চা শুরু করেন। কবি ভারতচন্দ্র ১৪ বছর বয়সে বিবাহ করেন।
পরবর্তী সময়ে তিনি গৃহত্যাগ করেন এবং হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে তিনি রামচন্দ্র মুন্সীর আশ্রয়ে থাকা শুরু করেন এবং ফরাসি ভাষা শিক্ষা শুরু করেন। এর পর তিনি পৈত্রিক সম্পত্তির ব্যাপারে বর্ধমান রাজের কাছে যান এবং কারারুদ্ধ হন। কারাগার থেকে পালিয়ে কবি এসে উপস্থিত হন কটকে। সেখানে তিনি বসবাস শুরু করেন।
তিনি এর পর তিনি ফরাসডাঙায় এসে উপস্থিত হন। সেখানে ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর (ফরাসি সরকারের দেওয়ান) সাহায্যে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের শরণাপন্ন হন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র কবিকে মাসিক ৪০ টাকা মাসোহারা দিয়ে নিজের “সভাকবি” নিযুক্ত করেন।মুলত এখান থেকেই তাঁর কাব্যরচনার সূত্রপাত ঘটে। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি “রসমঞ্জরী” নামে কাব্যতত্ত্ব বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন।
নানা গ্রন্থ
তিনি মাত্র ৪০ বছর বয়সে রচনা করেন “নাগাষ্টক”। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “অন্নদামঙ্গল” সময়কাল হল ১৭৫২ খ্রি: যা তাঁকে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে কালজয়ী করে তুলেছে। এছাড়াও তিনি “সত্যপীরের ব্রতকথা”, চণ্ডীনাটক প্রভৃতি রচনা করেন। ১৬৮২ শকাব্দ, ১৭৬০ খ্রি: তিনি পরলোক গমন করেন।



 
							 
							