নাট্য সাহিত্য

TRAGEDY বা ট্র্যাজেডি

বিশ্ব নাট্যসাহিত্যের একটি বিশেষ নাট্য আঙ্গিক হল ট্রাজেডি । বিশ্ব সাহিত্যের প্রায় সর্বত্র ট্রাজেডি নিয়ে নানা সময় নানা আলোচনা হয়েছে। হচ্ছেও। বাংলা নাট্যসাহিত্যেও রচিত হয়েছে বেশ কিছু মূল্যবান ট্রাজেডি। আমাদের এই আলোচনায়  ট্রাজেডি ও তার বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।

TRAGEDY বা ট্র্যাজেডি – সাধারণ ধারণা

ট্র্যাজেডির উৎপত্তি গ্রীসে। গ্রীক দেবতা ডায়নোসিসের বসন্তকালীন উৎসব থেকে এই রীতির উৎপত্তি। ‘ট্র্যাজেডি’ শব্দটির উৎপত্তি গ্রীক ‘ত্রাগোদিয়া’ শব্দ থেকে, যার মুল অর্থ ছাগলের গান’ (goat song). তাই শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ – ছাগ গীতি। ট্র্যাজেডির আদি রূপকার হলেন থেসপিস। এর পূর্ণতা লাভ করে এস্কাইলাস, সোফোক্লিস, ইউপিডিস এই ত্রয়ীর সমবেত প্রচেষ্টায়। এর বাংলা প্রতিশব্দ বিয়োগান্তক রচনা।

আদি-মধ্য-অন্ত সমন্বিত যে গুরুগম্ভীর নাট্য কাহিনীতে কোনো অসাধারণ গুণসম্পন্ন নায়কের নিয়তির প্রভাবে বা চরিত্রের অন্তর্নিহিত কোনো ত্রুটির কারণে চরিত্রটির পরাজয় ঘটে এবং যা দেখে দর্শকচিত্তে করুণা ও ভীতির উদ্রেক করে এবং পরিশেষে ক্যথারসিস বা ভাব মোক্ষণ ঘটায় তাকেই ট্রাজেডি বলে।

বৈশিস্ট্য

বিষয় হবে গুরগম্ভীর ও তাৎপর্যবাহী।

প্লট হবে ষড়ঙ্গ ও পরিমিত আয়াতনের যা আদি মধ্য অন্ত তিন স্তরে বিন্যস্ত।

উদ্দেশ্য হবে ভীতি ও করুণার উদ্রেক করে দর্শক মনে করুণ রসের আনন্দ দান করা।

ভাষা হবে ছন্দবদ্ধ।

নায়ক হবে সাধারণ থেকে অনেক উর্ধের মানুষ কিন্ত ভালো ও মন্দের মাঝামাঝি। তিনি অতিশয় ভালো এবং অতিশয় মন্দ কোনোটাই হবেন না।

ট্রাজেডির নায়ক হবেন দৈবপীড়িত বা নিয়তিলাঞ্ছিত।

ট্রাজেডির নায়ক অসম্ভব কর্মতৎপরতা সত্ত্বেও ক্রমশ হেরে যাবেন।

একনজরে

ট্র্যাজেডি সম্পর্কে প্রথম আলোচোনা করেন ৩৩০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে এরিস্টটল তাঁর ‘পোয়েটিক্স’ গ্রন্থে।

এরিস্টটল পোয়েটিক্স গ্রন্থের ষষ্ঠ অধ্যায়ে ট্রাজেডির সংজ্ঞা দিয়েছেন।

এই গ্রন্থের পঞ্চম, ষষ্ট, দ্বাদশ, অষ্টাদশ, চতুর্বিংশ, ও ষড়বিংশ অধ্যায়ে।

এরিস্টটল Tragedy র ছয়টি উপাদানের কথা বলেছেন। উপাদান গুলিকে তিনি দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা – অন্তরঙ্গ উপাদান [কাহিনী,চরিত্র,অভিপ্রায়] এবং বহিরঙ্গ উপাদান [সঙ্গীত, ভাষা, দৃশ্য]

এরিস্টটল চারটি শ্রেণির কথা বলেছেন। যথা – জটিল, কারুণ্যবহ, নীতিমুলক ও সরল

এর মধ্যে তিনি জটিল ট্র্যাজেডিকেই শ্রেষ্ঠ বলেছেন।

বাংলা সাহিত্যের প্রথম ট্রাজেডি বলা হয় জে সি গুপ্তের ‘কীর্তিবিলাস’কে (১৮৫২)। কিন্তু বাংলা সাহিত্যের এর প্রথম সার্থক সৃষ্টি মধুসূদন দত্তের ‘কৃষ্ণকুমারী’ (১৮৬১)।

এছাড়া উল্লেখযোগ্য বাংলা ট্রাজেডিগুলি হল – গিরিশচন্দ্র ঘোষের – প্রফুল্ল, বলিদান, রবীন্দ্রনাথের বিসর্জন, মালিনী, রাজা ও রানী, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নুরজাহান, সাজাহান, চন্দ্রগুপ্ত ইত্যাদি।

আলোচক – নীলরতন চট্টোপাধ্যায়