সুবোধ ঘোষ কথাসাহিত্যিক
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সুবোধ ঘোষ (১৯০৯ – ১৯৮০) কল্লোল – উত্তর যুগে ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার হিসাবে উজ্জল নক্ষত্র হিসাবে পরিচিত । শুধু সাহিত্য নয়, সামরিক বিদ্যা, পুরাতত্ত্ব কিংবা নৃবিদ্যাতেও তাঁর যথেষ্ট দক্ষতা ছিল।
তাঁর আদি নিবাস বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুর মহাকুমার বহর গ্রামে । পিতা সতীশচন্দ্র ঘোষ, মাতা কনকলতা দেবী। বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করলেও হাজারীবাগেই তাঁর শৈশব , যৌবনের বেশিরভাগ. সময় কেটেছে । হাজারীবাগ শহরের সেন্ট কলম্বাস কলেজে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হন । বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি ছিল অসীম কৌতুহল এবং জানার আকাঙ্ক্ষা । তাই বেশির ভাগ সময় হাজারীবাগের মহেশ ঘোষের লাইব্রেরিতে থাকতেন । দারিদ্র্যের কারনে পড়াশুনা অসম্পূর্ন রেখে জীবিকার সন্ধানে তিনি বের হন। নানা রকমের কাজ করতে হয়েছে , সেসব অভিজ্ঞতা অবশ্য পরবর্তী সময়ে লেখার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে। যে সব কাজ করেছিলেন , তা একনজরে এমন :
ক) হাজারীবাগের কুলি বস্তিতে টীকা দেওয়ার কাজ নিয়ে কর্মজগতে প্রবেশ করেন ।
খ) ” লাল মোটর কোম্পানী” র বাসের কনডাক্টরের কাজ
গ) সার্কাস দলে অংশগ্রহন করেন। সেখানে ক্নিয়েছেনভুমিকায় কাজ করা
ঘ) মুম্বাই পৌরসভায় ঝাড়ুদারের কাজ নেওয়া
ঙ ) মহামারী প্রতিরোধে টীকা দেওয়ার জন্য পূর্ব আফ্রিকাতে ও গিয়েছেন ।
চ) অভ্রখনিতে বিপদ থাকা সত্বেও ওভারসিয়ারের কাজ নিয়েছেন ।
ছ) স্বাধীনতা আন্দোলনেও অংশগ্রহন করেন ও জেল খাটেন ।
জ) গৌরাঙ্গ প্রেসে প্রুপরিডারের কাজ করেছিলেন
ঝ) আনন্দবাজার পত্রিকায় কাজে যোগদান করেন। লেখক হিসাবে স্বীকৃতিলাভ ঘটে । অনেকদিন এই পত্রিকার রবিবাসীয় বিভাগের সিনিয়র এডিটর ছিলেন ।
কল্লোল- উত্তর কথা সাহিত্যিকদের মধ্যে সুবোধ ঘোষ স্বতন্ত্র লেখক হিসাবে চিহ্নিত আছেন । গভীর আর্থ সামাজিক চেতনা,প্রখর বাস্তববোধ ও অভ্রান্তবোধ তাঁর রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট। মূলত: মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের , ভন্ডামি, ঈর্ষা, নীচতা,সুবিধাবাদী প্রবণতাকে ছোটগল্পের জগৎ এ তিনি নতুনভাবে নতুনরূপে আনলেন ।
সুবোধ ঘোষ লিখেছেন ১৫৭ টি গল্প, ৩০ টি উপন্যাস। এছাড়া রচনা করেছেন নাটক, প্রবন্ধ, রম্যরচনা । “কালপুরুষ”- ছদ্মনামে ও অনেকগ্রন্থ লিখেছেন ।
বাংলা সাহিত্যে তাঁর আবির্ভাব ঘটে গল্পকার হিসাবে । “অযান্ত্রিক” এবং “ফসিল”– এইদুই গল্পরচনার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্টিত করেন। ফসিল”- গল্পটি আনন্দবাজার পত্রিকায় দোল পূর্নিমায় মুদ্রিত হয় ১৯৪০ খ্রিঃ ।
তাঁর বিখ্যাত ছোটগল্পগুলি : সুন্দরম, কালোগুরু, শিবালয়, স্বর্গ হতে বিদায়, ঐতিহাসিক বস্তুবাদ, স্নানযাত্রা, গরল অমিয় ভেল, কৌন্তেয়, বারবধূ, পরশুরামের কুঠার, জতুগৃহ, ঠগিনী, ইত্যাদি ।
সুবোধ ঘোষের উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ
সুবোধ ঘোষের রচনা – ফসিল (১৯৪০) গ্রাম যমুনা (১৯৪৪) কুসুমেষু (১৯৫৬) পলাশের নেশা (১৯৫৭) মনোবাসিতা (১৯৫৭) নিত সিন্দুর (১৯৫৮) জতু গৃহ (১৯৬২) নিকষিত হেম (১৯৬৩) রূপ নগর (১৯৬৪)
শুধু গল্প নয়, উপন্যাসে রচনার ক্ষেত্রে তাঁর মুন্সিয়ানার পরিচয় মেলে । তাঁর প্রথম পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস “তিলাঞ্জলি ” (১৯৪৪) । এছাড়া অন্যান্য বিখ্যাক উপন্যাসগুলি হল : গঙ্গোত্রী, ত্রিযামা, শ্রেয়সী, শতকিয়া, নাগলতা সুজাতা, শ্রেয়সী, একটি নমস্কারে, শুন বরনারী ইত্যাদি ।
তাঁর জনপ্রিয় নাটক গুলি হলঃ অভ্যুদয়, শ্রেয়সী, সুজাতা ,বারবধু ইত্যাদি
তাঁর প্রবন্ধ তথা গবেষণামূলক গ্রন্থঃ ভারতের আদিবাসী , সিগমুন্ড ফ্রয়েড , ভারতীয় ফৌজের ইতিহাস , কাগজের নৌকা ।
তাঁর একটি জনপ্রিয় গ্রন্থের নাম–” ভারত প্রেমকথা”। মহাভারতের প্রেম কাহিনী অবলম্বনে গ্রন্থটি রচিত ।
পুরষ্কারঃ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “জগত্তারিনী পদক” পান । আনন্দ বাজার গোষ্টী থেকে তিনি “আনন্দ পুরস্কার”- পান