ধ্বনিতত্ত্ব

ধ্বনি পরিবর্তনের রীতি

বাংলা ব্যকরণের আলোচনায় একটি অন্যতম বিষয় ধ্বনি পরিবর্তনের রীতি । ধ্বনি পরিবর্তনের ধারায় আছে নানা প্রকার রীতি বা পদ্ধতি। এই আলোচনায় ধ্বনি পরিবর্তনের সেই বিভিন্ন রীতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

স্বরভক্তি : যুক্তবর্ণের উচ্চারণ ক্লেশ লাঘব করবার জন্য দুটি ব্যঞ্জনের মাঝে একটি স্বরধ্বনি এনে বর্ণ দুটিকে পৃথক করবার রীতিকে স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ বলে।

● ভক্তি কথাটির অর্থ পৃথক করে দেওয়া।
● বিপ্রকর্ষ কথাটির অর্থ ব্যবধান।
● কবিতার ছন্দ মাধুর্য রক্ষায় বিপ্রকর্ষ বড়ই সহায়ক।
●অ কারের আগম : কর্ম→ করম, জন্ম→ জনম।
● ই কারের আগম : প্রীতি→ পিরীতি, শ্রী→ ছিরি।
●উ কারের আগম : মুক্তা→মুকুতা, ব্লু→বুলু।
● এ কারের আগম : ধ্যান→ধেয়ান, ব্যাকুল→বেয়াকুল।
● ও কারের আগম : শ্লোক→শোলোক, চক্র→চক্কোর।
●ঋ কার রি ধ্বনি প্রাপ্ত : তৃপ্ত→ তিরপিত, সৃজিল→ সিরজিল।

★স্বরসঙ্গতি : বাংলায়, বিশেষ করে চলিতে বা মৌখিক বাংলায়, কোনো কোনো শব্দে পূর্বস্বরের প্রভাবে পরবর্তী স্বরধ্বনির এবং পরবর্তী স্বরের প্রভাবে পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির যে লক্ষণীয় পরিবর্তন হয়, বাংলার উচ্চারণগত এই বিশিষ্ট রীতিকে স্বরসঙ্গতি বলা হয়।

●পূর্বস্বরের প্রভাবে পরবর্তী স্বরের পরিবর্তন :

ইচ্ছা→ইচ্ছে, তিনটা→তিনটে,
পূজা→পুজো, তুলা→তুলো,

●পরস্বরের প্রভাবে পূর্ববর্তী স্বরের পরিবর্তন :

উড়ে→ওড়ে, শুনা→শোনা,
শিখা→শেখা, লিখে→লেখে,
বিলাতী→বিলতী,
দেই→দিই।

★অপিনিহিতি : শব্দের মধ্যে বা শেষে ব্যঞ্জনযুক্ত কোনো ই কার বা ও কার থাকলে তাকে ব্যঞ্জনটির অব্যবহিত পূর্বেই উচ্চারণ করে ফেলার রীতিকে অপিনিহিতি বলে।

●ই কারের অপিনিহিতি : আজি →আইজ।
● উ কারের অপিনিহিতি : সাধু →সাউধ।

★অভিশ্রুতি : অপিনিহিতি জাত ই কার বা ও কার এক বিশেষ সন্ধির নিয়মে পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির সঙ্গে মিলিত হয়ে তার রূপের যে পরিবর্তন ঘটায় , স্বরধ্বনির সেই পরিবর্তনকেই অভিশ্রুতি বলে।

● আজি→আইজ→আজ,
মাতৃকা→ মাইয়া→মেয়ে।

★য়-শ্রুতি ও অন্তঃস্থ ব-শ্রুতি : বাংলায় পাশাপাশি দুইটি স্বরবর্ণ থাকলে তাদের মধ্যে ব্যঞ্জনবর্ণের অভাবজনিত শুন্যতাটুকু পূর্ণ করবার জন্য য় কিংবা অন্তঃস্থ ব―এই যে অর্ধস্ফুট ব্যঞ্জনধ্বনির আগম হয়, তাকে য় শ্রুতি কিংবা অন্তঃস্থ ব শ্রুতি বলে।

● “বাংলায় ও-কার দ্বারা ব-শ্রুতি নির্দেশ করা হয়”― আচার্য সুকুমার সেন।
● খা+আ→খাবা→খাওয়া।
দে+আল→দেয়াল (য় শ্রুতি), দেওয়াল (ব শ্রুতি)।

★সমীভবন : একই শব্দের মধ্যে বিভিন্ন ব্যঞ্জনধ্বনি পাশাপাশি থাকলে উচ্চারণের সুবিধার জন্য ধ্বনি দুইটিকে একই ধ্বনিতে, কখনো বা একই বর্গের ধ্বনিতে রূপান্তরিত করার নাম সমীভবন বা সমীকরণ।

●উদাহরণ : গল্প →গপ্প,পদ্ম→পদ্দ।

★বর্ণবিকার : শব্দের অন্তর্গত কোনো মূল ধ্বনির পরিবর্তন ঘটলে তাকে বর্ণবিকার বলে।
●উদাহরণ : বাষ্প → ভাপ, গুলাব→গোলাপ।

★বর্ণবিপর্যয় :চলিত বাংলায় উচ্চারণ দোষে একই শব্দের অন্তর্গত দুইটি ব্যঞ্জনবর্ণ পরস্পর স্থান পরিবর্তন করলে তাকে বর্ণবিপর্যয় বলে।

●উদাহরণ : মুকুট→মুটুক, বাতাসা→বাসাতা।

★বর্ণাগম : উচ্চারণের সুবিধার জন্য শব্দের আদিতে বা শেষে নতুন বর্ণের আবির্ভাব ঘটলে তাকে বর্ণাগম বলে।
●স্বরাগম: স্পর্ধা→ আস্পর্ধা, নয়ন→নয়ান, ধন্য→ধন্যি।
●ব্যঞ্জনাগম : অম্ল→অম্বল, সীমা→সীমানা, এলা→এলাচ।

★বর্ণদ্বিত্ব : অর্থের গুরুত্ব বোঝাবার জন্য শব্দমধ্যস্থ বর্ণকে দ্বিত্ব করে উচ্চারণ করবার রীতিকে বর্ণদ্বিত্ব বলে।
●সকাল→সক্কাল, মুলুক→মুল্লুক।

★বর্ণলোপ : উচ্চারণ সহজ করবার জন্য অনেক সময় শব্দমধ্যস্থ এক বা একাধিক বর্ণের যে বিলোপ সাধন করা হয় তাই বর্ণ লোপ।
● র লোপ : স্মার্ট→স্মাট।
●হ কার লোপ : শিয়ালদহ→শিয়ালদা।
●ফাল্গুন→ফাগুন।

আলোচক – মৌসুমি বেরা, সদস্যা, টার্গেট এসএসসি বাংলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *