শক্তি চট্টোপাধ্যায় – জীবন ও সাহিত্য
শক্তি চট্টোপাধ্যায় জীবনান্দ-উত্তর একজন প্রধান কবি। কবিতার পাশাপাশি গদ্যসাহিত্য ও উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, ষাটের দশকের হাংরি আন্দোলনের জনকও মনে করা হয় তাঁকে এবং ছাত্রাবস্থায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতও ছিলেন। শক্তি চট্টোপাধ্যায় – জীবন ও সাহিত্য শীর্ষক আলোচনায় শক্তিমান এই কবি সম্পর্কে নানা তথ্য পরিবেশিত হয়েছে।
জন্ম ও বংশ পরিচয়
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে নভেম্বর দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বহড়ুতে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে। তাঁর পিতা বামানাথ চট্টোপাধ্যায় এবং মাতার নাম কমলা দেবী। কবির দাম্পত্য সঙ্গী ছিলেন মীনাক্ষী চট্টোপাধ্যায়।
শিক্ষা
১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করার পর শক্তি চট্টোপাধ্যায় সিটি কলেজে পড়াশোনা করেন। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাণিজ্য বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে স্নাতকের পড়াশোনা শুরু করেন, কিন্তু পরীক্ষায় তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।
কর্মজীবন
শক্তি চট্টোপাধ্যায় বিভিন্ন পেশায় এলেও কোনো পেশাতেই তিনি দীর্ঘস্থায়ী ছিলেন না। তাঁর কর্মজীবনের সূচনা হয় ‘ক্ল্যারিয়ন’ নামক বিজ্ঞাপণ কোম্পানিতে কপিরাইটার হিসেবে। সাক্সবি ফার্মা লিমিটেডে তিনি কিছুদিন সহকারী হিসেবে কাজ করেন। ভবানীপুর টিউটোরিয়াল হোমে শিক্ষকতা করেছেন। আবার ব্যবসা করার চেষ্টাও করেছেন কবি। পরে একটি মোটর কোম্পানিতে জুনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তবে আনন্দবাজার পত্রিকায় ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি কাজ করেছেন।
বাংলা সাহিত্য ও মক টেস্ট, লাইভ আলোচনার জন্য যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল প্রয়াসে। যুক্ত হতে ক্লিক করুন।
সম্পাদনা
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘প্রগতি’ নামে একটি হাতে লেখা পত্রিকা প্রকাশ করেন। পরে তা মুদ্রিত আকারে প্রকাশিত হয়।
সাহিত্য জীবন
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্য জীবনের সূচনা গদ্য রচনার মধ্য দিয়ে। একটি পত্রিকায় ‘নিরুপমের দুঃখ’ নামে গল্প লেখেন তিনি। তবে তাঁর প্রথম প্রকাশিত কবিতা ‘যম’ যা ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকায় ছাপা হয়। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘হে প্রেম, হে নৈঃশব্দ্য’ প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘কুয়োতলা’ (১৯৬১)। অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আছে ‘অবনী বাড়ি আছো’ (১৯৭৩) ও ‘দাঁড়াবার জায়গা’ (১৯৮৬)। কলকাতা নিয়ে নানা ফিচার লিখেছেন রূপচাঁদ পক্ষী ছদ্মনামে। আবার স্ফূলিঙ্গ সমাদ্দার ছদ্মনামেও লিখেছেন নানা গদ্য।
কবির কাব্যগ্রন্থের তালিকা (বর্ণানুক্রমিক)
অঙ্গুরী তোর হিরণ্যজল (১৯৮০), অস্ত্রের গৌরবহীন একা (১৯৭৫), আমাকে জাগাও (১৯৭৫), আমি ছিঁড়ে ফেলি ছন্দ তন্তুজাল (১৯৭৬), ঈশ্বর থাকেন জলে (১৯৭৫), এই আমি যে পাথরে (১৯৮৩), এই তো মর্মর মূর্তি (১৯৭৩), ও চির প্রণম্য অগ্নি (১৯৭৬), কক্সবাজারের সন্ধ্যা (১৯৭৪), কিছু মায়া রয়ে গেল (১৯৯৬), কোথাকার তরবারি কোথায় রেখেছে (১৯৮৩), কবিতার তুলো ওড়ে (১৯৭৬), ছিন্ন বিচ্ছিন্ন (১৯৭৬), জ্বলন্ত রুমাল (১৯৭৫), জঙ্গল বিষাদে আছে (১৯৯৪), ধর্মে আছো জিরাফেও আছো (১৯৬৫), প্রচ্ছন্ন স্বদেশ (১৯৮২), প্রভূ নষ্ট হয়ে যাই (১৯৭৩), পাড়ের কাঁথা মাটির বাড়ি (১৯৭১), পরশুরামের কুঠার (১৯৭৮), ভাত নেই পাথর রয়েছে (১৯৭৯), ভালোবেসে ধুলোয় নেমেছি (১৯৭৮), মানুষ বড় কাঁদছে (১৯৭৮), যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো (১৯৮২), সুখে আছি (১৯৭৫), সোনার মাছি খুন করেছি (১৯৭৬), সুন্দর এখানে একা নয় (১৯৭৬), হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান (১৯৬৮),
মৃত্যু
২৩শে মার্চ, ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বভারতীর অতিথি অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত থাকার সময় শান্তিনিকেতনে কবির আকস্মিক মৃত্যু হয়। কবির মৃত্যুর পর সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ লিখেছেন –
“কবির মাটিতে কবির মৃত্যু। এ তো খুবই অভিপ্রেত। খুবই ঐতিহাসিক। শক্তি তাহলে শেষাবধি জয়ী হয়ে থাকল। বুঝতে পারছি সে মৃত্যু কে মুখোমুখি দেখে একই গলায় বলে থাকবে, ‘তুমি কে হে ছোকড়া? আমি শক্তি চট্টোপাধ্যায়। আর তুমি তো একটা খণ্ডত (ৎ)’। … কোনও কোনও মানুষ কাঁধে হাত রাখলে পৃথিবী বাসযোগ্য। সেই এক মানুষ শক্তি সম্পূর্ন মানুষ। একেবারে স্বতন্ত্র”।
পুরস্কার ও সম্মাননা
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে সুরেশচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর ‘যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো’ কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান।
সর্বশেষ সংশোধিত – ০৭.১১.২০২৪