বাক্যতত্ত্ব

বাক্যের প্রকারভেদ

যেকোন ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল বাক্য। এই পোস্টে বাক্য কী, তার উপাদানই বা কী এবং বাক্যের প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা বাক্যের প্রকারভেদ শীর্ষক আলোচনায় বাক্যের গঠনগত ও অর্থগত উভয় আলোচনাই করব।

বাক্য ও বাক্যের প্রকারভেদ

মনের ভাব প্রকাশে এই বাক্যের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করতে ভাষাকে আশ্রয় করে। ভাষার মুল উপকরণ হল বাক্য, আর বাক্যের মৌলিক উপাদান শব্দ। একাধিক শব্দ যখন নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ক্রমানুসারে পাশাপাশি অবস্থান করে এবং একটি সুসংবদ্ধ অর্থ প্রকাশ করে তখন তাকে বাক্য বলে।

যেমনঃ আমি যদি বলি, “আমার লাল জামা চাই” (প্রসঙ্গত উল্লেখ্য শব্দ বাক্যে স্থান পেলে পদ নামে পরিচিত হয়)

উপরোক্ত পদ সমষ্টির মাধ্যমে আমার মনের ভাব স্পষ্ট হয়। তাই উক্ত পদসমষ্টিকে আমরা বাক্য বলতে পারি।

বাক্যের দুটি অংশ – উদ্দেশ্য আর বিধেয়

বাক্যে যে কাজ সম্পাদন করে তাকে বলে উদ্দেশ্য। যখন কর্তৃপদ উহ্য থাকে তখন ক্রিয়া কে ‘কে’ বা ‘কী’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর মেলে তা-ই উদ্দেশ্য।

উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বলা হয় তা-ই হল বিধেয়।

যেমন – রাম স্কুলে যায়। এখানে কর্তৃপদ ‘রাম’ হল উদ্দেশ্য আর তার সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে অর্থাৎ ‘স্কুলে যায়’ হল বিধেয়।

বাক্যের প্রকারভেদ

গঠনগত এবং অর্থগত এই দুই মানদণ্ডে বাক্যের শ্রেণিভেদ হয়ে থাকে। গঠনগত দিক থেকে বাক্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –

সরল বাক্য

যে বাক্যে একটি মাত্র উদ্দেশ্য ও একটি মাত্র বিধেয় থাকে তাকেই বলে সরলবাক্য। তবে অসমাপিকাক্রিয়া এক বা একাধিক থাকতে পারে।

উদাহরণঃ শুভম শান্ত ছেলে।

চেনার সহজ উপায়ঃ একটিই মাত্র বাক্য, ক্রিয়া+এ, ক্রিয়া+য়, ক্রিয়া+নি, বসে থাকে।

জটিল বাক্য

যে বাক্যে একটি প্রধান খণ্ড বাক্য থাকে এবং তার অধীনে এক বা একের বেশী অপ্রধান খন্ড বাক্য থাকে তাকেই বলে জটিল বাক্য।

উদাহরণঃ বড় যদি হতে চাও, ছোট হও আগে (অপ্রধান খন্ডবাক্য     প্রধান খন্ডবাক্য)

চেনার সাহজ উপায়ঃ যে-সে, যা-তা, যত-তত, যতদিন-ততদিন, যেহেতু-সেহেতু, জখন-তখন, যদি-তবে, যদিও-তবুও ইত্যাদি ব্যবহার হয়ে থাকে।

যৌগিক বাক্য

একাধিক খণ্ড বাক্য বিভিন্ন অব্যয়(সংযোজক, বিয়োজক, সংকোচক) দ্বারা যুক্ত হয়ে একটি বাক্য গঠন করলে তাকে বলে যৌগিকবাক্য।

উদাহরণঃ রমা বুদ্ধিমতী কিন্তু শুভা নির্বোধ।

চেনার সহজ উপায়ঃ এবং, আর, অ, কিন্তু, তাই, তাহলে, সেহেতু, ফলে, অথবা, সুতরাং, তবে, ইত্যাদি ব্যবহার হয়ে থাকে।

অর্থগত দিক থেকে বাক্যকে নানা ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ

নির্দেশাত্মক বাক্য

কোন বিষয়কে সাধারণভাবে নির্দেশ করা হয় বা বর্ণনা করা হয় যে বাক্যের সাহায্যে তাকেই বলে নির্দেশাত্মক বাক্য।

যেমনঃ শরতের আকাশ ভারি সুন্দর।

প্রশ্নবোধক বাক্য

কোন কিছু জিজ্ঞাসা করা বা প্রশ্ন করা বোঝায় যে বাক্যের সাহায্যে তাকেই বলে প্রশ্নবোধক বাক্য।

যেমনঃ আপনার বাড়ি কোথায়?

অনুজ্ঞাবাচক বাক্য

যে বাক্যের দ্বারা আদেশ, অনুরোধ, উপরোধ, উপদেশ, নিষেধ ইত্যাদি বোঝানো হয় তাকেই বলে অনুজ্ঞাবাচক বাক্য।

যেমনঃ বৃষ্টিতে খেলা কোরোনা।

দাদা আমায় একটু জল দিন না।

বিস্ময়বোধক বাক্য

যে বাক্য দ্বারা আনন্দ, বিষাদ, ঘৃনা, ক্রোধ, ভয় ইত্যাদি বোঝানো হয় তাকেই বলে বিস্ময়বোধক বাক্য।

যেমনঃ ছি ছি মিথ্যা কথা বলা ভারি অন্যায়।

বাহঃ তোমার জামাটিতো বেশ সুন্দর দেখতে হয়েছে।

সদর্থক বাক্য

যে বাক্যের দ্বারা কোন বিষয়ের অস্তিত্বের অর্থ প্রকাশিত হয় তাকেই বলে সদর্থক বাক্য।

যেমনঃ বিজ্ঞানের শক্তি অপরিমেয়। সাথি অনুষ্ঠানে গান গাইতে সম্মত হল।

আলোচক – শম্পা দাসপাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *