পাঁচমিশালী

জেলার সাহিত্যিক – বাংলা ইন্টারভিউ

জেলার সাহিত্যিক শীর্ষক পোস্টে আমরা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার কবি সাহিত্যিকদের পরিচয় তুলে ধরেছি। মূলত এই তথ্যগুলি SLST, PSC সহ অন্যান্য বাংলা পরীক্ষার ইন্টারভিউতে কাজে লাগবে। পরীক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে আমরা বহু পরিশ্রম সাধ্য এই তথ্যগুলি তুলে ধরলাম।

জেলার সাহিত্যিক – তালিকা দেখুন

এক একটি জেলা অনুসারে সেই জেলার বিখ্যাত সাহিত্যিক, তাঁদের সাধারণ পরিচিতি ও রচনার নাম উল্লেখ করা হয়েছে যা সকলের উপকারে লাগবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। তালিকা নিম্নরূপ –

পূর্ব বর্ধমান

১. ‘কবিকঙ্কণ’ মুকুন্দ চক্রবর্তী (ষোড়শ শতক) – জন্মস্থান রায়না থানার দামুন্যা গ্রাম। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে চণ্ডীমঙ্গল কাব্যধারা তথা মঙ্গলকাব্য ধারার অন্যতম কবি। কাব্যের নাম ‘অভয়ামঙ্গল’।

২. কাশীরাম দাস (আনু. সপ্তদশ শতকের প্রথম দিক) – জন্মস্থান সিঙ্গি গ্রাম। কুলগত পদবি ‘দেব’। সংস্কৃত মহাভারতের বাংলা অনুবাদক।

৩. অক্ষয়কুমার দত্ত (১৮২০ – ১৮৬৬) – জন্মস্থান পূর্বস্থলী থানার চুপী গ্রাম। পিতার নাম পীতাম্বর দত্ত। ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার সম্পাদক।

৪. সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৮২ – ১৯২২) – জন্মস্থান পূর্বস্থলী থানার চুপী গ্রাম। পিতা রজনীনাথ দত্ত, মাতা মহামায়া দেবী। মূল পরিচয় কবি হিসেবে। বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলি হল – ‘সবিতা’, ‘সন্ধিক্ষণ’, ‘বেণু ও বীণা’, ‘কুহু ও কেকা’, ‘হসন্তিকা’ ইত্যাদি।

৫. কালিদাস রায় (১৮৮৯ – ১৯৭৫) – জন্মস্থান কড়ুই গ্রাম। পিতার নাম যোগেন্দ্রনারায়ণ রায়। পেশায় ছিলেন শিক্ষক। মূল পরিচয় কবি হিসেবে। কবির উপাধি ‘কবিশেখর’। বিখ্যাত কাব্যগুলি হল –

৬. কুমুদরঞ্জন মল্লিক (১৮৮৩ – ১৯৭০) – জন্মস্থান কোগ্রাম। কবি হিসেবে পরিচিত। কবির উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কাব্য হল – ‘উজানী’, ‘বনতুলসী’, ‘রজনীগন্ধ্যা’ ইত্যাদি।

৭. সাধক কমলাকান্ত (১৭৭২ – ১৮২০) – জন্মস্থান কালনা। মূল পদবি ভট্টাচার্য। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের একজন শাক্ত পদকর্তা হিসেবে খ্যাত।

৮. রেভারেন্ড লালবিহারী দে (১৮২৪ – ১৮৯৪) – জন্মস্থান সোনাপলাশী গ্রাম। বিখ্যাত দুটি উপন্যাস ‘চন্দ্রমুখী’ (১৮৫৯) এবং ‘গোবিন্দসামন্ত’ এর রচয়িতা।

৯. সুকুমার সেন (১৯০১ – ১৯৯২) – পৈতৃক নিবাস রায়না থানার গোতান গ্রাম। পিতার নাম হরেন্দ্রনাথ। মূল পরিচয় একজন ভাষাতাত্ত্বিক, সমালোচক ও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রণেতা হিসেবে। বিখ্যাত গ্রন্থগুলি হল – ‘বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস’ (৫টি খন্ডে সম্পূর্ণ), ‘ভাষার ইতিবৃত্ত’, ‘বাঙ্গালা সাহিত্যে গদ্য’ ইত্যাদি।

১০. রাজকৃষ্ণ রায় (১৮৪৯ – ১৮৯৪) – জন্মস্থান রামচন্দ্রপুর। বাংলা সাহিত্যে তিনি একজন ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার হিসেবে পরিচিত। ‘দ্বাদশ গোপাল’, ‘অবসর-সরোজিনী’, ‘বামনভিক্ষা’, ‘তরণীসেববধ’ প্রভৃতি গ্রন্থের রচয়িতা। এছাড়া ‘ভারতকোষ’ নামক কোষগ্রন্থের সঙ্কলক।  

পশ্চিম বর্ধমান

১. কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯ – ১৯৭৬) – জন্মস্থান চুরুলিয়া গ্রাম। পিতার নাম – কাজী ফকির আহমেদ। মাতা জাহেদা খাতুন। বাংলা কাব্যসাহিত্যে তিনি ‘বিদ্রোহী কবি’ নামে পরিচিত। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’ (১৯২২)। অন্যান্য কাব্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য – ‘সাম্যবাদী’, ‘ফণীমনসা’, ‘চক্রবাক’, ‘ঝিঙে ফুল’, ‘সঞ্চিতা’ ইত্যাদি।

উত্তর দিনাজপুর

১. নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় (১৯১৮ – ১৯৭০) – জন্মস্থান বালিয়াডিঙ্গি। বাংলা সাহিত্যের খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক। ‘উপনিবেশ’, ‘শিলালিপি’, ‘লালমাটি’ প্রভৃতি উপন্যাস এবং ‘বীতংস’, ‘দুঃশাসন’ প্রভৃতি গল্পগ্রন্থের রচয়িতা।

দক্ষিণ দিনাজপুর

১. মন্মথ রায় (১৮৯৯ – ) স্থায়ী নিবাস বালুরঘাট। আধুনিক নাট্যকার। ‘কারাগার’, ‘ধর্মঘট’, ‘জীবনটাই নাটক’ ইত্যাদি বিখ্যাত নাটকের রচয়িতা। বাংলা নাট্যসাহিত্যে প্রথম একাঙ্ক তিনিই রচনা করেন।

পূর্ব মেদিনীপুর

চিত্তরঞ্জন মাইতি (১৮২৫ – ২০১৩) – জন্মস্থান কাঁথি। পিতার নাম নলিনীজীবন মাইতি। মাতার নাম নির্মলা দেবী। বাংলা সাহিত্যে আধুনিক কথাসাহিত্যিক হিসেবে সুপরিচিত। উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলি হল ‘অক্ষয়বটের কড়চা’, ‘অগ্নিকন্যা’, ‘আর্য অনার্য’ প্রভৃতি।

পূর্ব মেদিনীপুরের অন্যান্য সাহিত্যিকিদের মধ্যে সুশোভন সরকার ও অনিল ঘড়াইয়ের নাম উল্লেখযোগ্য।

পশ্চিম মেদিনীপুর

১. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০ – ১৮৯১) – জন্মস্থান বীরসিংহ গ্রাম। পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা সাহিত্যে গদ্য রচনায়, অনুবাদ কর্ম, শিশু সাহিত্য রচনায় ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের নাম প্রাতঃস্মরণীয়। ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’, ‘শকুন্তলা’, ‘বাঙ্গালার ইতিহাস’, ‘বর্ণপরিচয়’, ‘সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃত সাহিত্যশাস্ত্র বিষয়ক প্রস্তাব’ বিভিন্ন গ্রন্থের রচয়িতা। ছদ্মনাম – কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোস্য ও ভাইপো সহচরস্য।

২. রমাপদ চৌধুরী (১৯২২ – ২০১৮) জন্মস্থান – খড়গপুর। পিতা – মহেশচন্দ্র চৌধুরী। মাতা দুর্গাসুন্দরী দেবী। বাংলা সাহিত্যে একজন কথাসাহিত্যিক হিসেবে সুপরিচিত। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উপন্যাস ‘প্রথম প্রহর’, ‘দ্বীপের নাম টিয়ারং’, ‘খারিজ’, ‘লালবাঈ’ ইত্যাদি।

৩. কিরণ মৈত্র (১৯২৪ – ২০০৪) – জন্মস্থান ঘাটাল। পিতার নাম রামনারায়ণ। বাংলা সাহিত্যের জগতে তিনি একজন নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা হিসেবে পরিচিত। উল্লেখযোগ্য নাটক ‘সেতু’।

ঝাড়গ্রাম

রামচাঁদ মুর্মু (১৮৯৬ – ১৯৯৯) – জন্মস্থান কামারবন্দি। একজন বিশিষ্ট কবি ও সমাজ সংস্কারক হিসেবে পরিচিত। ‘সারি ধরম সেরেঞ্চ পুঁথি’, আনন্দমালা’ প্রভৃতি গ্রন্থের রচয়িতা।

এই জেলার অন্যান্য বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিক হিসেবে নলিনী বেরা ও পরিতোষ মাহাতোর নাম স্মরণীয়।

নদীয়া

১. অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় (১৮৬১ – ১৯৩০) – জন্মস্থান সিমলা। পিতার নাম মথুরানাথ। মাতার নাম সৌদামিনী। বাংলা সাহিত্যে ঐতিহাসিক রচনার জন্য খ্যাত। তাঁর ‘সিরাজউদ্দৌল্লা’, ‘মীরকাশিম’ উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

২. কৃত্তিবাস ওঝা (আনু. ত্রয়োদশ শতকের শেষ) – জন্মস্থান ফুলিয়া গ্রাম। মহর্ষি বাল্মীকি রচিত রামায়ণের বাংলা অনুবাদক।

৩. করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৭৭ – ১৯৫৫) জন্মস্থান বাগাচঁড়া গ্রাম। পিতার নাম নৃসিংহ বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তিনি একজন বিশিষ্ট কবি হিসেবে পরিচিত। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কাব্য হল ‘বঙ্গমঙ্গল’, ‘ঝরাফুল’, ‘শান্তিজল’, ‘রবীন্দ্র আরতি’ ইত্যাদি।

৪. যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত (১৮৮৭ – ১৯৫৪) – জন্মস্থান শান্তিপুর। বাংলা কাব্যসাহিত্যে তিনি ‘দুঃখবাদী কবি’ হিসেবে পরিচিত। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হল ‘অনুপূর্বা’, ‘মরুমায়া’, ‘ত্রিযামা’, ‘মরীচিকা’ ইত্যাদি।

৫. সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১৯১৯ – ২০০৩) – জন্মস্থান মাতুলালয় কৃষ্ণনগরে। পিতার নাম ক্ষিতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। মাতার নাম যামিনী দেবী। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তিনি একজন আধুনিক কবি হিসেবে সুপরিচিত। ‘পদাতিক’, ‘চিরকূট’, ‘অগ্নিকোণ’ প্রভৃতি তাঁর বিখ্যাত কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ।

মালদহ

তন্ত্রবিভূতি (ষোড়শ শতক) – মনসামঙ্গল কাব্যের কবি। কাব্যের নাম ‘মনসাপুরাণ’। কবি তাঁর কাব্যটি সপ্তদশ শতকের প্রথম দিকে রচনা করেন বলে জানা যায়। এছাড়া অসীম দাশগুপ্ত ও বিনয় সরকার মালদহের সাহিত্যিক হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত।

জলপাইগুড়ি

১. সমরেশ মজুমদার (১৯৪২ – ) বাংলা সাহিত্যে একজন খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত। ‘উত্তরাধিকার’, ‘কালবেলা’ ‘কালপুরুষ’ এই ত্রয়ী উপন্যাস ছাড়াও ‘গর্ভধারিনী’, ‘ডানায় রোদের গন্ধ’, ‘তিনসঙ্গী’ প্রভৃতি উপন্যাসের রচয়িতা।

২. মলয় বসু (১৯৩৭ – ১৯৯০) – পিতার নাম প্রফুল্লকুমার। অধ্যাপনার পাশাপাশি লিখেছেন বেশ কিছু প্রবন্ধ। ‘বাংলা সাহিত্যে রূপকথা চর্চা’, ‘অক্টোবর বিপ্লব ও আধুনিক বাংলা সাহিত্য’ তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ।

৩. ভক্তি বিশ্বাস (১৯২১ – ২০০০) – পিতার নাম যোগেশচন্দ্র। মাতার নাম সুভাষিনী দেবী। লিখেছেন বেশ কিছু ভ্রমণমূলক রচনা। ‘হিমবাহপথে বদ্রীনারায়ণ’, ‘অরুণাচলের পথে পথে’ ‘নেপাল হিমালয়ে’ প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

কোচবিহার

১. অমিয়ভূষণ মজুমদার (১৯১৮ – ২০০১) পিতার নাম অনন্তভূষণ মজুমদার। পারিবারিক পদবি ‘বাগচী’। খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক হিসেবে সুপরিচিত। তাঁর ‘গড় শ্রীখন্ড’, ‘রাজনগর’, ‘মহিষকুড়ার উপকথা’ অতি জনপ্রিয় কয়েকটি উপন্যাস।

২. অপরাজিতা দেবী বা রাধারানী দেবী (১৯০৩ – ১৯৮৯) – কলকাতায় জন্ম হলেও শৈশব অতিবাহিত হয় কোচবিহারে। ‘কল্লোল’, ‘ভারতী’, ‘উত্তরা’ সহ নানা পত্রিকায় তাঁর কবিতা প্রকাশ পায়। ‘লীলাকমল’, ‘বনবিহগী’ তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ।

বাঁকুড়া

১. শক্তিপদ রাজগুরু (১৯২২ – ২০১৪) – জন্মস্থান গোপবন্দী। বাংলা সাহিত্যের আধুনিক কথাসাহিত্যিক। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উপন্যাসের নাম ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘মণিবেগম’, ‘অন্যায় অবিচার’ প্রভৃতি।

২. সীতারাম দাস (সপ্তদশ শতক) – জন্মস্থান ইন্দাস। ধর্মমঙ্গল কাব্যের কবি। ১৫৯৭ খ্রিস্টাব্দে সীতারাম দাস তাঁর ধর্মমঙ্গল কাব্যটি রচনা করেন।

পুরুলিয়া

১. সুনীল মাহাতো

২. নির্মল হালদার

৩. অভিমন্যু মাহাতো

৪. সৈকত রক্ষিত

উত্তর চব্বিশ পরগণা

১. ঈশ্বর গুপ্ত (১৮১২ – ১৮৫৯) – জন্মস্থান কাঞ্চনপাড়া। পিতার নাম হরিনারায়ণ দাশগুপ্ত। মাতার নাম শ্রীমতী দেবী। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তিনি ‘যুগসন্ধিক্ষণের কবি’ হিসেবে পরিচিত। বাংলা সাময়িক পত্রের ইতিহাসে বিখ্যাত ‘সংবাদ প্রভাকর’ তাঁরই সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়।

২. ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (১৮৬৩ – ১৯২৭) – জন্মস্থান খড়দহ। পিতার নাম গুরুচরণ ভট্টাচার্য। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একজন প্রখ্যাত নাট্যকার হিসেবে পরিচিত। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নাটক হল ‘বঙ্গের প্রতাপাদিত্য’, ‘খাঁজাহান’, ‘আলমগীর’, ‘নরনারায়ণ’ ইত্যাদি।

৩. ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় (১৮৪৭ – ১৯১৯) – জন্মস্থান শ্যামনগর, রাহুতা গ্রাম। পিতার নাম বিশ্বম্ভর মুখোপাধ্যায়। বাংলা সাহিত্যে রম্যরচয়িতা হিসেবে সুপরিচিত। বিখ্যাত ডমরুধর চরিত্র তাঁরই সৃষ্টি। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘ডমরুচরিত’, ‘ফোকলা দিগম্বর’, ‘কঙ্কাবতী’, ‘মুক্তামালা’ ইত্যাদি।

৪. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮ – ১৮৯৪) – জন্মস্থান নৈহাটির কাঁঠালপাড়ায়। বাংলা সাহিত্যে ‘সাহিত্যসম্রাট’ হিসেবে পরিচিত। বাংলা সাহিত্যে একজন শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক হিসেবে পরিচিত। উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘কপালকুন্ডলা’, ‘রাজসিংহ’, ‘আনন্দমঠ’। ‘কমলাকান্তের দপ্তর’, ‘বিবিধ প্রবন্ধ’, ‘লোকরহস্য’ প্রভৃতি তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধগ্রন্থ। ছদ্মনাম – কমলাকান্ত।

৫. মনোমোহন বসু (১৮৩১ – ১৯১২) – জন্মস্থান ছোট জাগুলিয়া। বাংলা সাহিত্যে একজন নাট্যকার হিসেবে পরিচিত। ‘রামাভিষেক’, ‘সতী’, ‘হরিশচন্দ্র’ ইত্যাদি নাটকের রচয়িতা। সম্পাদনা করেছেন ‘সংবাদ বিভাকর’ ও ‘মধ্যস্থ’ পত্রিকার।

৬. রামপ্রসাদ সেন (১৭২০ – ১৭৮১) – জন্মস্থান হালিশহর। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের খ্যাতনামা শাক্ত পদকর্তা। শাক্তপদ রচনা ছাড়াও ‘বিদ্যাসুন্দর’ ও ‘কালীকীর্তন’ নামে ক্ষুদ্র গ্রন্থের রচনা করেন রামপ্রসাদ সেন।

দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা

১. রাজনারায়ণ বসু (১৮২৬ – ১৮৯৯) – জন্মস্থান বোড়াল গ্রাম। বাংলা সাহিত্যে প্রাবন্ধিক হিসেবে পরিচিত। ‘সেকাল আর একাল’, ‘বৃদ্ধ হিন্দুর আশা’, ‘ধর্মতত্ত্বদীপিকা’ প্রভৃতি গ্রন্থের রচয়িতা।

২. রামনারায়ণ তর্করত্ন (১৮২২ – ১৮৮৬) – জন্মস্থান হরিনাভি গ্রাম। পিতার নাম রামধন শিরোমণি। বাংলা সাহিত্যে রামনারায়ণ একজন নাট্যকার হিসেবে পরিচিত। বলা হয় তিনিই বাংলা সাহিত্যের প্রথম মৌলিক নাট্যকার। তাঁর ‘কুলীনকুলসর্বস্ব নাটক’ বহুল পরিচিত। এছাড়াও কিছু প্রহসন রচনা ও সংস্কৃত নাটক অনুবাদ করেছেন তিনি।

৩. শক্তি চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৪ – ১৯৯৫) – জন্মস্থান জয়নগর। পিতার নাম বামানাথ চট্টোপাধ্যায়। বাংলা সাহিত্যে আধুনিক কবি ও প্রাবন্ধিক হিসেবে সুপরিচিত। ‘হে প্রেম হে নৈঃশব্দ’, ‘ধর্মে আছো জিরাফেও আছো’, ‘যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো’, ‘অঙ্গুরী তোত হিরণ্যজল’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা। পেয়েছেন সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার।

হুগলি

১. আশাপূর্ণা দেবী (১৯০৯ – ১৯৯৫) – পৈতৃক নিবাস বেগমপুর। পিতার নাম হরেন্দ্রনাথ গুপ্ত। মাতার সরলাসুন্দরী দেবী। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অন্যতম একজন কথাসাহিত্যিক। তাঁর বিখ্যাত ত্রয়ী উপন্যাস হল ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’, ‘সুবর্ণলতা’, ‘বকুলকথা’। এছাড়াও ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘বলয়গ্রাস’, ‘নেপথ্য নায়িকা’ প্রভৃতি উপন্যাসের রচয়িতা। পেয়েছেন জ্ঞানপীঠ, সাহিত্য একাডেমি সহ নানা পুরস্কার।

২. রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮২৭ – ১৮৮৭) – জন্মস্থান বাকুলিয়া। বাংলা সাহিত্যে তিনি একজন কবি ও সম্পাদক হিসেবে পরিচিত। তাঁর ‘পদ্মিনী উপাখ্যান’ (১৮৫৮) সুপরিচিত আখ্যানকাব্য। এছাড়াও ‘কর্মদেবী’, ‘শূরসুন্দরী’, ‘কাঞ্চীকাবেরী’ প্রভৃতি কাব্যের রচয়িতা। সম্পাদনা করেছেন ‘এডুকেশন গেজেট’ পত্রিকার।   

৩. রামরাম বসু (১৭৫৭ – ১৮৭৩) – জন্মস্থান চুঁচুড়া। বাংলা গদ্যের ইতিহাসে তিনি একজন স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের লেখক তথা উইলিয়ম কেরির মুন্সি ছিলেন। ‘রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র’, ‘লিপিমালা’ তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

৪. রামমোহন রায় (১৭৭৪ – ১৮৩৩) – জন্মস্থান রাধানগর। পিতার নাম রামকান্ত। মাতার নাম তারিণী দেবী। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একজন প্রাবন্ধিক ও সমাজ সংস্কারক হিসেবে সুপরিচিত। তাছাড়া তিনি আত্মীয় সভার প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন। প্রকাশ করেছেন একাধিক সাময়িক পত্রিকা।

বীরভূম

১. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৮ – ১৯৭১) – জন্মস্থান লাভপুর। পিতার নাম হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। মাতার নাম প্রভাবতী দেবী। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তিনি একজন সুবিখ্যাত কথাসাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত। ‘ধাত্রীদেবতা’, ‘কবি’, ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’, ‘গণদেবতা’ প্রভৃতি উপন্যাস তাঁর বিখ্যাত সৃষ্টি।

২. ননী ভৌমিক (১৯২১ – ১৯৯৬) – জন্মস্থান বাংলাদেশের রংপুরে হলেও পরবর্তীকালে সিউড়িতে বসবাস শুরু করেন।

৩. ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় (১৯০৪ – ১৯৭৫) – জন্মস্থান খয়রাশোল। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তিনি একজন কবি ও কথাসাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত। ‘চিতা বহ্নিমান’, ‘ভাগীরথী বহে ধীরে’, ‘শাপমোচন’ প্রভৃতি উপন্যাস এবং ‘কাশবনের কন্যা’, ‘হিঙ্গুল নদীর কূলে’ প্রভৃতি কাব্যের রচয়িতা। সম্পাদনা করেছেন ‘বঙ্গলক্ষ্মী’ পত্রিকার।

মুর্শিদাবাদ

১. বিধায়ক ভট্টাচার্য (১৯০৭ – ১৯৮৬) – জন্মস্থান জিয়াগঞ্জ। পিতার নাম হরিচরণ ভট্টাচার্য। মাতার নাম সত্যবতী। বাংলা সাহিত্যের জগতে তিনি একজন প্রখ্যাত নাট্যকার হিসেবে পরিচিত। উল্লেখযোগ্য নাটক ‘মেঘমুক্তি’, ‘ক্ষুধা’, ‘খবর বলছি’, ‘মাটির ঘর’ ইত্যাদি।

২. মনীশ ঘটক (১৯০২ – ১৯৭৯) – জন্মস্থান বহরমপুর। পিতার নাম সুরেশচন্দ্র। কল্লোল যুগের অন্যতম খ্যাতনামা কবি। প্রথম কাব্য ‘শিলালিপি’। ‘পটলডাঙ্গার পাঁচালী’, ‘মান্ধাতার বাবার আমল’ প্রভৃতি বিখ্যাত গ্রন্থের রচয়িতা। সম্পাদনা করেছেন ‘বর্তিকা’ পত্রিকার। ছদ্মনাম ‘যুবনাশ্ব’।

৩. শিবরাম চক্রবর্তী (১৯০৩ – ১৯৮০) – পৈতৃক নিবাস জরুরবাকলা। পিতার নাম শিবপ্রসাদ চক্রবর্তী। বাংলা সাহিত্যে রম্যরচয়িতা হিসেবে বিশেষ খ্যাত শিবরাম। দুটি বিখ্যাত চরিত্র হর্ষবর্ধন ও গোবর্ধন তাঁরই সৃষ্টি।

৪. রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী (১৮৬৪ – ১৯১৯) – জন্মস্থান কান্দির জেমো গ্রাম। পিতার নাম গোবিন্দসুন্দর। মাতার নাম চন্দ্রকামিনী দেবী। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একজন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক হিসেবে সুপরিচিত। তাঁর ‘নানাকথা’ ‘যজ্ঞকথা’, ‘কর্মকথা’, ‘জিজ্ঞাসা’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

৫. সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ (১৯৩০ – ২০১২) – জন্মস্থান খোশবাসপুর গ্রাম। বাংলা সাহিত্যে কথাসাহিত্যিক ও গোয়েন্দা উপন্যাস রচয়িতা। সৃষ্ট বিখ্যাত চরিত্র কর্ণেল। উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হল ‘নীলঘরের নটী’, ‘হিজলকন্যা’, ‘উত্তর জাহ্নবী’, ‘তৃণভূমি’ ইত্যাদি।

হাওড়া

১. ভারতচন্দ্র রায় (১৭১২ – ১৭৬০) – জন্মস্থান পেঁড়ো গ্রাম। পিতার নাম নরেন্দ্রনারায়ণ। উপাধি ‘রায়গুণাকর’। অষ্টাদশ শতকের মঙ্গলকাব্য ধারার শ্রেষ্ঠ কবি। তাঁর রচিত ‘অন্নদামঙ্গল’ নানা দিক থেকে বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য। ‘অন্নদামঙ্গল’ ছাড়াও তিনি ‘রসমঞ্জরী’, ‘সত্যপীরের কথা’, ‘নাগাষ্টক’ প্রভৃতি গ্রন্থের রচয়িতা।

২. রামবসু (১৭৮৬ – ১৮২৮) – জন্মস্থান সালকিয়া। কবিয়াল হিসেবে সুবিদিত। শ্যামা ও কৃষ্ণ বিষয়ক বহু গানের রচয়িতা।

৩. শঙ্করীপ্রসাদ বসু (১৯২৮ – ২০১৪) – সাহিত্য সমালোচক ও বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক হিসেবে পরিচিত। তাঁর ‘বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ’, ‘নিবেদিতা লোকমাতা’, ‘চণ্ডীদাস ও বিদ্যাপতি’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

৪. পূর্ণেন্দু পত্রী (১৯৩১ – ১৯৯৭) – জন্মস্থান নাকোল। পিতার নাম পুলিনবিহারী। মাতার নাম নির্মলা দেবী। একজন সাহিত্যিক তথা প্রচ্ছদ শিল্পী হিসেবে সুপরিচিত। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘একমুঠো রোদ’, ‘দাঁড়ের ময়না’, ‘ইল্লিঝিল্লি’ ইত্যাদি।

কলকাতা

১. ভূদেব মুখোপাধ্যায় (১৮২৭ – ১৮৯৪) – পিতার নাম বিশ্বনাথ তর্কভূষণ। মাতার নাম ব্রহ্মময়ী দেবী। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তিনি একজন প্রাবন্ধিক হিসেবে সুপরিচিত। তাঁর ‘পারিবারিক প্রবন্ধ’, ‘আচার প্রবন্ধ’, ‘পুরাবৃত্তসার’ প্রভৃতি গ্রন্থের রচয়িতা। এছাড়া তাঁর ‘অঙ্গুরীয় বিনিময়’, ‘স্বপ্নলব্ধ ভারতবর্ষের ইতিহাস’ সুপরিচিত গ্রন্থ।

২. অজয় হোম (১৯১৩ – ১৯৯২) – পাখি নিয়ে নানা গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ করেছেন। এ নিয়ে লিখেছেন একাধিক গ্রন্থ। ‘বাংলার পাখি’, ‘বিচিত্র জীবজন্তু’, ‘চেনা অচেনা পাখি’ তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ।

৩. কবিতা সিংহ (১৯৩১ – ১৯৯৮) – বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক হিসেবে সুপরিচিত। ‘সহজ সুন্দরী’, ‘হরিণাবৈরী’, ‘সোনারূপার কাঠি’ প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ।

৪. গজেন্দ্রকুমার মিত্র (১৯০৮ – ১৯১৪) – পিতার নাম মহেন্দ্রকুমার মিত্র। মাতার নাম সুধীরাবালা দেবী। বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক হিসেবে সুপরিচিত। তাঁর ‘কলকাতার কাছেই’, ‘পৌষ ফাগুনের পালা’ এবং ‘উপকণ্ঠে’ একত্রে ত্রয়ী উপন্যাস হিসেবে সুপ্রসিদ্ধ। অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আছে ‘পাঞ্চজন্য’, ‘রাই জাগো রাই জাগো’, ‘বহ্নিকন্যা’ ইত্যাদি। প্রসিদ্ধ ‘মিত্র এন্ড ঘোষ’ প্রকাশনা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।

৫. নারায়ণ সান্যাল (১৯২৪ – ২০০৫) – জন্মস্থান কালীঘাট। পিতার নাম চিত্তসুখ সান্যাল। মাতার নাম বসন্তলতা দেবী। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তিনি একজন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত। ছদ্মনাম ‘বিকর্ণ’। তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হল ‘মনামী’, ‘অলকানন্দা’, ‘গজমুক্তা’, ‘বকুলতলা পি এল ক্যাম্প’ ইত্যাদি।

আলোচক – নীলরতন চট্টোপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *