বাংলা সাহিত্যে কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় (বসু)
কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় (বসু) ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের প্রথম দুইজন মহিলা স্নাতকের একজন এবং ইউরোপীয় চিকিৎসা শাস্ত্রে শিক্ষিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা চিকিৎসক।সমাজসেবক, রাজনীতিক ও প্রথম বাঙ্গালী নারী চিকিৎসক হিসেবে কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর প্রতিভা অপরিসীম।
জন্ম ও বংশ পরিচয়:
১৮৬১ সাল বাঙালির ইতিহাসে নানা কারণে বিখ্যাত। এ বছর জন্মগ্রহণ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।এ সময়েই লেখা হয় বাংলা সাহিত্যের একমাত্র স্বার্থক মহাকাব্য মাইকেল মধুসূদন রচিত মেঘনাদ বধ।আর ঐ বছরের(১৮৬১)১৮ জুলাই জন্মগ্রহন করেন পাশ্চাত্য ধারার প্রথম বাঙালি নারী চিকিৎসক কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়।উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলার নারী শিক্ষাআন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় সমর্থক ব্রজকিশোর বসুর কন্যা কাদম্বিনী।তাঁর মূল বাড়ি ছিল বর্তমান বাংলাদেশের বরিশালের চাঁদসি তে। তাঁর বাবা ভাগলপুর স্কুলের প্রধানশিক্ষক ছিলেন। ব্রজকিশোর বসু অভয়চরণ মল্লিকের সাথে ভাগলপুরে মহিলাদের অধিকারের আন্দোলন করেছিলেন। তাঁরা মহিলাদের সংগঠন ভাগলপুর মহিলা সমিতি স্থাপন করেছিলেন।
শিক্ষা ও কর্মজীবন:
নারী শিক্ষা আন্দোলনের ফলে ১৮৭৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এন্ট্রাস পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ পান দুজন ছাত্রী। তারা হলেন সরলা দাস ও কাদম্বিনী বসু।তারা পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন কি কারণে যেন সরলা দাস পরীক্ষা দিতে পারেন নি।শেষ পর্যন্ত কাদম্বিনী বসু পরীক্ষা অংশ নেন এবং দ্বিতীয় বিভাগে এন্ট্রাস পাস করেন। নারী শিক্ষা আন্দোলনের ফলে ১৮৭৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এন্ট্রাস পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ পান দুজন ছাত্রী। তারা হলেন সরলা দাস ও কাদম্বিনী বসু।তারা পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন কি কারণে যেন সরলা দাস পরীক্ষা দিতে পারেন নি।শেষ পর্যন্ত কাদম্বিনী বসু পরীক্ষা অংশ নেন এবং দ্বিতীয় বিভাগে এন্ট্রাস পাস করেন। ১৮৮৩ সালে কলকাতার বেথুন কলেজের ছাত্রী হিসেবে কাদম্বিনী বসু বি এ পরীক্ষায় অংশ নেন এবং কৃতিত্বের সাথে বি এ ডিগ্রি লাব করেন। তখন তাকে বাংলার প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট হিসেবে স্বিকৃতি দেয়া হয় ।
স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর কাদম্বিনী সিদ্বান্ত নেন মেডিকেলে পড়বেন। নারী শিক্ষার অতুৎসাহী সমর্থক পিতা ব্রজকিশোর বসু সানন্দে কন্যার সিদ্বান্তকে স্বাগত জানান। ১৮৮৩ সালে কাদম্বিনী মেডিকেলে ভর্তি হলেন এবং ঐ বছরই তার বিয়ে হয়।তিনি বিয়ে করেন মেডিকেল কলেজের স্বনাম খ্যাত শিক্ষক বিপত্নীক দ্বারকানাথ গাঙ্গুলীকে। বিয়ের সময় কাদম্বিনীর বয়স ছিলো ২১ আর দ্বারকানাথের ৩৯।দাম্পত্য জীবনে সুখী হয়েছিলেন । বিয়ের পর স্বামীর অনুপ্রেরণায় কাদম্বিনী গাঙ্গুলী প্রবল উৎসাহ নিয়ে পড়ালেখা শুরু করেন। তবে কলকাতার রক্ষণশীল মানুষেরা কাদম্বিনীর ডাক্তারী পড়াকে ভালো চোখে দেখেনি এবং তারা নানা রকম কুৎসা রটায়। রাত জেগে পড়া বা সংসারের কাজ থেকে অব্যাহতি নিয়ে পড়া সবখানেই স্বামীর সপ্রশংস সহযোগিতা লাভ করেছেন কাদম্বিনী।
শিক্ষাগত দিক
মেডিকেলের ছাত্রী হিসেবে সেসময় তিনি মাসিক কুড়ি টাকা বৃত্তি পেয়েছিলেন। ১৮৮৬ সালে মেডিকেলের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিলেন। লিখিত পরীক্ষার সব বিষয়ে পাস করলেন।কিন্তু ব্যবহারিক পরীক্ষার একটি অপরিহার্য অংশেঅকৃতকার্য হলেন। তারপরও কতৃপক্ষ তার দীর্ঘদিনের অধ্যায়ন ও নিষ্ঠার কথা বিবেচনা করে ১৮৮৬ সালে আকে গ্র্যাজুয়েট অব বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ ( জিবিএমসি ) ডিগ্রি দেন।এটি পাওয়ার পর তিনিই হন প্রথম ভারতীয় ডিগ্রিপ্রাপ্ত নারী চিকিৎসক। তিনি প্রথম বাঙালী নারী চিকিৎসক হিসেবে ১৮৮৮ সালে মাসিক তিনশ টাকা বেতনে যোগ দেন লেডি ডাফরিন মহিলা হাসপাতালে । ডাক্তারী পেশায় নির্দিষ্ট সময় থাকে না বলে না কাদম্বিনী গাঙ্গুলীকেরোগীদের সাহায্যার্থে রাত দিনের যেকোনো সময় হাসপাতালে বা রোগীদের বাড়িতে যেতে হতো। তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজ এ বিষয়টি ভালো চোখে দেখেনি।। তারা কাদম্বিনীর নামে নানা রকম নোংরা কথা রটিয়ে দেয়।
১৮৯১ সালে সনাতনপন্থী সাময়িকী বঙ্গবাসী তাকে পরোভাবে বেশ্যা বলে অভিহিত করে। কাদম্বিনী গাঙ্গুলী বঙ্গবাসী পত্রিকার সম্পাদক মহেশ পালের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। মামলায় কাদম্বিনী জয় লাভ করেন। মহেশ পালের ৬ মাসের কারাদন্ড ও ১০০ টাকা জরিমানা হয়। কাদম্বিনী গাঙ্গুলী মামলায় জয়ী হওয়ার পর ১৮৯৩ সালে চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষার জন্য এডিনবার্গে যান। সালে কলকাতার বেথুন কলেজের ছাত্রী হিসেবে কাদম্বিনী বসু বি এ পরীক্ষায় অংশ নেন এবং কৃতিত্বের সাথে বি এ ডিগ্রি লাব করেন। তখন তাকে বাংলার প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট হিসেবে স্বিকৃতি দেয়া হয় । স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর কাদম্বিনী সিদ্বান্ত নেন মেডিকেলে পড়বেন। নারী শিক্ষার অতুৎসাহী সমর্থক পিতা ব্রজকিশোর বসু সানন্দে কন্যার সিদ্বান্তকে স্বাগত জানান। ১৮৮৩ সালে কাদম্বিনী মেডিকেলে ভর্তি হলেন এবং ঐ বছরই তার বিয়ে হয়।
বিবাহিত জীবন
তিনি বিয়ে করেন মেডিকেল কলেজের স্বনাম খ্যাত শিক্ষক বিপত্নীক দ্বারকানাথ গাঙ্গুলীকে। বিয়ের সময় কাদম্বিনীর বয়স ছিলো ২১ আর দ্বারকানাথের ৩৯।দাম্পত্য জীবনে সুখী হয়েছিলেন । বিয়ের পর স্বামীর অনুপ্রেরণায় কাদম্বিনী গাঙ্গুলী প্রবল উৎসাহ নিয়ে পড়ালেখা শুরু করেন। তবে কলকাতার রক্ষণশীল মানুষেরা কাদম্বিনীর ডাক্তারী পড়াকে ভালো চোখে দেখেনি এবং তারা নানা রকম কুৎসা রটায়। রাত জেগে পড়া বা সংসারের কাজ থেকে অব্যাহতি নিয়ে পড়া সবখানেই স্বামীর সপ্রশংস সহযোগিতা লাভ করেছেন কাদম্বিনী।
মেডিকেলের ছাত্রী হিসেবে সেসময় তিনি মাসিক কুড়ি টাকা বৃত্তি পেয়েছিলেন। ১৮৮৬ সালে মেডিকেলের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিলেন। লিখিত পরীক্ষার সব বিষয়ে পাস করলেন।কিন্তু ব্যবহারিক পরীক্ষার একটি অপরিহার্য অংশেঅকৃতকার্য হলেন। তারপরও কতৃপক্ষ তার দীর্ঘদিনের অধ্যায়ন ও নিষ্ঠার কথা বিবেচনা করে ১৮৮৬ সালে আকে গ্র্যাজুয়েট অব বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ ( জিবিএমসি ) ডিগ্রি দেন।এটি পাওয়ার পর তিনিই হন প্রথম ভারতীয় ডিগ্রিপ্রাপ্ত নারী চিকিৎসক। তিনি প্রথম বাঙালী নারী চিকিৎসক হিসেবে ১৮৮৮ সালে মাসিক তিনশ টাকা বেতনে যোগ দেন লেডি ডাফরিন মহিলা হাসপাতালে । ডাক্তারী পেশায় নির্দিষ্ট সময় থাকে না বলে না কাদম্বিনী গাঙ্গুলীকেরোগীদের সাহায্যার্থে রাত দিনের যেকোনো সময় হাসপাতালে বা রোগীদের বাড়িতে যেতে হতো। তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজ এ বিষয়টি ভালো চোখে দেখেনি।। তারা কাদম্বিনীর নামে নানা রকম নোংরা কথা রটিয়ে দেয়।১৮৯১ সালে সনাতনপন্থী সাময়িকী বঙ্গবাসী তাকে পরোভাবে বেশ্যা বলে অভিহিত করে। কাদম্বিনী গাঙ্গুলী বঙ্গবাসী পত্রিকার সম্পাদক মহেশ পালের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন।
মামলায় কাদম্বিনী জয় লাভ করেন। মহেশ পালের ৬ মাসের কারাদন্ড ও ১০০ টাকা জরিমানা হয়। কাদম্বিনী গাঙ্গুলী মামলায় জয়ী হওয়ার পর ১৮৯৩ সালে চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষার জন্য এডিনবার্গে যান।সেখান থেকে সাফল্যজনক ভাবে শিক্ষা সমাপ্ত করে আবার দেশে ফিরে আসেন। আমৃত্যু তিনি চিকিৎসক হিসেবে মানুষের সেবা করে গেছেন। কাদম্বিনী গাঙ্গুলী যেমন সফল চিকিৎসক তেমনি দায়িত্বশীল স্ত্রী ও স্বার্থক জননী ছিলেন।
প্রতিভা
ডাক্তার ছাড়াও তিনি ছিলেন সমাজসেবী এবং দেশপ্রেমিক। স্বর্ণকুমারী দেবীর সঙ্গে ১৮৮৯ সালে তিনি ভারতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে বঙ্গদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তা ছাড়া, ১৯০৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত নারী সম্মেলনের তিনি ছিলেন অন্যতম উদ্যোক্তা।১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে বোম্বে শহরে কংগ্রেসের পঞ্চম অধিবেশনে প্রথম যে ছয় জন নারী প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিলেন কাদম্বিনী ছিলেন তাঁদের অন্যতম একজন । পরের বছর তিনি কলকাতার কংগ্রেসের ষষ্ঠ অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন । কাদম্বিনী ছিলেন কংগ্রেসের প্রথম মহিলা বক্তা ।
অবদান
কাদম্বিনী গান্ধীজীর সহকর্মী হেনরি পোলক প্রতিষ্ঠিত ট্রানসভাল ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সভাপতি এবং ১৯০৭ খ্রীষ্টাব্দে কলকাতায় অনুষ্ঠিত মহিলা সম্মেলনের সদস্য ছিলেন । ১৯১৪ সালে তিনি কলকাতায় সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের অধিবেশনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন । এই অধিবেশন মহাত্মা গান্ধীর সম্মানের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল । কাদম্বিনী চা বাগানের শ্রমিকদের শোষনের বিষয়ে অবগত ছিলেন এবং তিনি তাঁর স্বামীর দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করেন যিনি আসামের চা বাগানের শ্রমিকদের কাজে লাগানোর পদ্ধতির নিন্দা করেছিলেন । কবি কামিনী রায়ের সাথে কাদম্বিনী দেবী ১৯২২ খ্রীষ্টাব্দে বিহার এবং ওড়িশার নারীশ্রমিকদের অবস্থা তদন্তের জন্য সরকার দ্বারা নিযুক্ত হয়েছিলেন ।
দেহাবসান :
কাদম্বিনী গাঙ্গুলী ১৯২৩ সালের ৩ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।
মূল্যায়ন :
কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে পরবর্তী সময়ে অনেক মেয়ে মেডিকেল কলেজে পড়ালেখা করেন। তারা ও সফল চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন।
তথ্যসূত্র – দ্বাদশ শ্রেণির টেক্সট বই(সাহিত্য সংস্কৃতির ইতিহাস),ইন্টারনেট এবং বিভিন্ন রেফারেন্স বই।