তৎপুরুষ সমাস বিস্তারিত আলোচনা
আমরা এর আগে সমাসের প্রাথমিক ধারণা আলোচনা করেছি। প্রথম পর্বের সেই আলোচনায় ব্যাসবাক্য, সমস্যমান পদ সহ আনুষঙ্গিক বিষয় আলোচিত হয়েছে। আমরা পরবর্তী আলোচনাগুলিতে সমাসের এক একটি শ্রেণির বিস্তারিত আলোচনার পক্ষপাতী যাতে সকলের স্পষ্ট ধারণা হয়। সেই সঙ্গে থাকছে প্রচুর উদাহরণ। আমাদের আজকের বিষয় তৎপুরুষ সমাস । আমরা বাকি সমাস সম্পর্কেও সবিস্তারে আলোচনা করব। আলোচনাটি কেমন লাগল তা কমেন্টে জানানোর অনুরোধ রইল।
তৎপুরুষ সমাস
সাধারণ পরিচিতি – পূর্বপদের বিভিন্ন কারকের বিভক্তিচিহ্ন সমাসবদ্ধ পদে লোপ পায় এবং পরপদের অর্থ প্রধান হয়। যেমন – বধূকে বরণ = বধূবরণ, তৃষ্ণা দ্বারা ঋত = তৃষ্ণার্ত, বৌদ্ধদের ধর্ম = বৌদ্ধধর্ম, কণ্ঠে আগত = কণ্ঠাগত ইত্যাদি।
তৎপুরুষ সমাসের শ্রেণিগুলি হল – কর্ম তৎপুরুষ, করণ তৎপুরুষ, অপাদান তৎপুরুষ, অধিকরণ তৎপুরুষ, নিমিত্ত তৎপুরুষ, সম্বন্ধ তৎপুরুষ, উপপদ তৎপুরুষ ও নঞ তৎপুরুষ সমাস। এছাড়াও অলুক্ ও নিত্য সমাসও আছে।
কর্ম তৎপুরুষ
পূর্বপদের কর্মের ‘কে’ বিভক্তি সমাসবদ্ধ পদে লোপ পায়। যেমন – কাপড়কে কাচা = কাপড়কাচা, লোককে দেখানো = লোকদেখানো, চরণকে আশ্রিত = চরণাশ্রিত ইত্যাদি। এছাড়া অতীত, আগত, আপন্ন, আশ্রিত, প্রবিষ্ট, প্রাপ্ত, সংক্রান্ত শব্দযোগেও এই প্রকার সমাস হয়। যেমন – স্মরণকে অতীত = স্মরণাতীত, বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন, চরণকে আশ্রিত = চরণাশ্রিত ইত্যাদি।
করণ তৎপুরুষ
পূর্বপদের করণের বিভক্তি স্বরূপ ‘দ্বারা’, ‘দিয়া’ সমাসবদ্ধ পদে লোপ পায়। যেমন – গোঁজা দ্বারা মিল = গোঁজামিল, ঘৃত দ্বারা পক্ব = ঘৃতপক্ব, রোগ দ্বারা শীর্ণ = রোগ-শীর্ণ ইত্যাদি। এছাড়া পরপদে পূর্ণ, হীন, বর্জিত, যুক্ত, অণ্বিত, বিশিষ্ট ইত্যাদি শব্দযোগে করণ তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন – জল দ্বারা পূর্ণ = জলপূর্ণ, বুদ্ধি দ্বারা হীন = বুদ্ধিহীন, জয় দ্বারা যুক্ত = জয়যুক্ত, জ্ঞান দ্বারা বিশিষ্ট = জ্ঞানবিশিষ্ট ইত্যাদি।
অপাদান তৎপুরুষ
পূর্বপদে অপাদানের বিভক্তি হিসেবে ব্যবহৃত ‘হইতে’, ‘থেকে’ ইত্যাদি সমাসবদ্ধ পদে লোপ পায়। যেমন – সত্য হইতে ভ্রষ্ট = সত্যভ্রষ্ট, মিত্তির হইতে জাত = মিত্তির-জা, ঘর থেকে ছাড়া = ঘরছাড়া ইত্যাদি।
আমাদের ব্যাকরণ অভিধান অ্যাপ ডাউনলোড করুন।
সম্বন্ধ তৎপুরুষ
পূর্বপদে সম্বন্ধের বিভক্তি ‘র’ বা ‘এর’ সমাসবদ্ধ পদে লোপ পায়। যেমন – বৌদ্ধদের ধর্ম = বৌদ্ধধর্ম, পরীক্ষার অর্থী = পরীক্ষার্থী, দেবের আলয় = দেবালয়, গিরির ঈশ = গিরীশ ইত্যাদি।
অধিকরণ তৎপুরুষ
পূর্বপদে অধিকরণের বিভক্তি ‘এ’, ‘য়’ প্রভৃতি সমাসবদ্ধ পদে লোপ পায়। যেমন – রাতে কানা = রাতকানা, তালিকায় ভূক্ত = তালিকাভূক্ত, গঙ্গায় স্নান = গঙ্গাস্নান ইত্যাদি।
নিমিত্ত তৎপুরুষ
পূর্বপদে নিমিত্তের বিভক্তি হিসেবে ব্যবহৃত ‘নিমিত্ত’, ‘জন্য’ প্রভৃতি সমাসবদ্ধ পদে লোপ পায়। যেমন – ভিক্ষার নিমিত্ত ঝুলি = ভিক্ষা-ঝুলি, তীর্থের নিমিত্তে যাত্রা = তীর্থযাত্রা, বালিকাদের জন্য বিদ্যালয় = বালিকা-বিদ্যালয় ইত্যাদি
নঞ তৎপুরুষ
এই শ্রেণির তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদটি নঞর্থক (‘নয়’, ‘না’, ‘নেই’ ইত্যাদি) হয়। যেমন – নাই ভুঁই = বিভুঁই, নয় সুস্থ = অসুস্থ, নেই আহার = অনাহার ইত্যাদি।
উপপদ তৎপুরুষ
এই সমাসে উপপদ ও কৃদন্ত পদের মিলন ঘটে। যেমন – পঙ্কে জন্মে যা = পঙ্কজ, গো পালন করে যে = গোপ, সর্ব জানেন যিনি = সর্বজ্ঞ ইত্যাদি।