
প্যারীচাঁদ মিত্র
ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে হিন্দু কলেজের অন্যতম ছাত্র প্যারীচাঁদ মিত্র বাংলা গদ্যে বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় রেখে গেছেন। তিনি জন কল্যাণের জন্যই কলম ধরেছিলেন, স্ত্রী সমাজের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি ছিল তাঁর একমাত্র আকাঙ্ক্ষা। তিনি প্রধানত জ্ঞান সাধনার পথিকৃৎ ছিলেন।
ডিরোজিও নামে ওই সময় এক জন বিখ্যাত অধ্যাপক ছিলেন হিন্দু কলেজে। তিনি তাঁর শিষ্য ও ভাবশিষ্য ছিলেন। তিনি বাংলার নব জাগরণের অন্যতম নেতা ছিলেন। তিনি ক্যালকাটা পাবলিক লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান ছিলেন। প্যারীবাবু ফার্সি, বাংলা ও ইংরেজি ভালো জানতেন। বিশেষ করে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বহু গ্রন্থ রচনা করে তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি মহিলাদের জন্য একটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। তাঁর সহযোগী ছিলেন রাধানাথ শিকদার।
প্যারীচাঁদ – আরও তথ্য
এ ছাড়াও জনকল্যাণ মূলক কাজও করতেন তিনি। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেটের সদস্য ছিলেন। তিনি পশু-ক্লেশ নিবারণী সভারও সদস্য ছিলেন। বেথুন সোসাইটি ও ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন প্যারীচাঁদ মিত্র। জ্ঞানান্বেষণ সভার সদস্য হন তিনি ১৮৩৮ সালে। তাঁর ইংরেজি ভাষায় রচিত লেখাসমূহ ছাপা হত ইংলিশম্যান, ইন্ডিয়ান ফিল্ড, ক্যালকাটা রিভিউ, হিন্দু প্যাট্রিয়ট, ফ্রেন্ড অফ ইন্ডিয়া প্রভৃতি পত্রিকায়।
SUBSCRIBE OUR CHANNEL
প্যারীচাঁদ মিত্র পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন এবং সফলকামও হয়েছিলেন। তিনি স্ত্রী শিক্ষা প্রচারে যথেষ্ট সক্রিয়তার পরিচয় দেন। তিনি বিধবাবিবাহ সমর্থন করতেন। তিনি বাল্যবিবাহ এবং বহুবিবাহের বিরোধিতা করেন।
‘আলালের ঘরের দুলাল‘ তাঁর শ্রেষ্ঠ এবং বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস। এই গ্রন্থটি ইংরেজিতেও অনুবাদ করা হয়েছিল ‘দ্য স্পয়েল্ড চাইল্ড’ নামে।
প্যারীচাঁদের গদ্যকে “আলালী” গদ্য বলা হয়ে থাকে।যে ভাষায় সকলে কথোপকথন করে,তিনি সেই ভাষায় ‘আলালের ঘরের দুলাল’ রচনা করেন। সমকালীন সমাজজীবনের বাস্তবচিত্র রূপায়িত করতে গিয়ে তিনি গুরুগম্ভীর সংস্কৃতবহুল ভাষার পরিবর্তে আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করেছেন। তাঁর মোট ১৯টি বই প্রকাশিত হয়েছে, যার মধ্যে ১১টি বাংলায়।
অন্যান্য বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য
মদ খাওয়া বড় দায়, জাত থাকার কী উপায় (১৮৫৯), ‘রামারঞ্জিকা’ (১৮৬০), ‘কৃষিপাঠ’ (১৮৬১), ‘যৎকিঞ্চিত’ (১৮৬৫), ‘ডেভিড হেয়ারের জীবনচরিত’ (১৮৭৮), ‘অভেদী’ (১৮৭১), ‘আধ্যাত্মিকা’ (১৮৮০), ‘গীতাঙ্কুর’ (৩য় সংস্করণ, ১৮৭০), ‘এতদ্দেশীয় স্ত্রীলোকদিগের পূর্বাবস্থা’ (১৮৭৮) এবং ‘বামাতোষিণী’ (১৮৮১)।
এ বইগুলোর বিষয়বস্তুতে রয়েছে জীবনী, নীতিকথা, ভ্রমণ ও নারী জাগরণ। তিনি ছোটো ছোটো সরল বাক্য দিয়ে ভাব প্রকাশের পক্ষপাতী ছিলেন।
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র প্যারীচাঁদের ভাষার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে লিখেছিলেন – “তিনিই প্রথম দেখাইলেন যে, সাহিত্যের দ্বারা যদি বাঙ্গালা দেশকে উন্নত করিতে হয়, তবে বাঙ্গালা দেশের কথা লইয়াই সাহিত্য গড়িতে হইবে।” পরিশেষে বলা যায়, বাংলা গদ্যকে সরল করে তোলার চেষ্টায় তাঁর অবদান অপরিসীম।
সর্বশেষ সংশোধিত – ১০.১১.২০২৪