চর্যাপদবাংলা সাহিত্য

চর্যাপদকার লুই পা

লুই পা চর্যাপদের আদি কবি। চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন। ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজ দরবারের গ্রন্থাগার হতে ১৯০৭ সালে ‘চর্যাচর্য বিনিশ্চয়’ নামক পুথিটি আবিষ্কার করেন। বাংলা সাহিত্যের এই আদি নিদর্শন সম্পর্কে সাহিত্যিক ও বাঙালি পাঠকের কৌতূহলের অন্ত নেই। চর্যাপদের মোট পদকর্তা ২৪ জন। তার মধ্যে লাড়ী ডোম্বীপার কোন পদ পাওয়া যায়নি। অনেকের মতে, চর্যাপদের আদিকবি লুইপা। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, প্রাচীনতম চর্যাকার শবরপা এবং আধুনিকতম চর্যাকার সরহ বা ভুসুকুপা।
কাহ্নপা সর্বাধিক ১৩টি পদ রচনা করেন। শবরপাকে চর্যাপদের বাঙালি কবি মনে করা হয়।

লুই পা

প্রথম চর্যাপদ রচয়িতা। তিনি বৌদ্ধধর্মের একজন মহাসিদ্ধ, কবি ও বৌদ্ধ – ধর্মগ্রন্থের রচয়িতা। তিব্বতী ভাষায় ‘লুই’ শব্দের অর্থ ‘সেই ব্যক্তি যিনি মাছের অন্ত্র ভক্ষণ করেন’, কিন্তু ডঃ সুকুমার সেন মনে করেন, ‘লুই’ শব্দটি প্রাচীন বাংলা শব্দ ‘লোহিত’ থেকে এসেছে। আবার অসমীয়া ঐতিহাসিক ডিম্বেশ্বর নাগের মতে শব্দটি ‘লুইট’ থেকে এসেছে। ‘লুইট’ কথার অর্থ ‘ব্রহ্মপুত্র নদ’।

সিদ্ধযোগীদের জীবনী নিয়ে লেখা ‘চতুরাশিতি সিদ্ধ প্রবৃত্তি’ গ্রন্থে লুইপাকে চুরাশিজন মহাসিদ্ধের একজন বলা হয়েছে। উক্ত গ্রন্থানুসারে লুইপা সিংহলদ্বীপে এক রাজার দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন। গ্রন্থানুসারে তাঁকে তাঁর পিতা রাজ্য শাসনের দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বোধিলাভ যার উদ্দেশ্য তিনি কিভাবে সিংহাসনের মায়াপাশে আবদ্ধ হবেন ?
বোধিলাভের সাধনায় তিনি প্রথমে আসেন বুদ্ধগয়া, তারপর মগধ। গ্রন্থ থেকে জানা যায়, এই বোধিলাভের সাধনায় তিনি দীর্ঘ বারো বছর মাছের অন্ত্র খেয়ে জীবনধারণ করেন !! উক্ত গ্রন্থ অনুযায়ী জানা যায়, মগধের রাজা ইন্দ্রপাল ও তাঁর মন্ত্রী যথাক্রমে দারিক পা ও দেঙ্গি পা নামে তাঁর শিষত্ব গ্রহণ করেন।

লুই পা এবং মীননাথ এক ব্যক্তি কিনা এ নিয়ে তর্ক বিতর্ক আছে। চর্যাপদের প্রথম পদ লুই পার রচনা বলে লুই পা কে আদিসিদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করা হয়ে থাকে।

তাঁর সম্বন্ধে এমনও বলা হয় যে, তিনি নাকি শ্রীভগবদ অভিসময়, বজ্রসত্ত্ব সাধনা, তত্ত্বস্বভাব বুদ্ধদয়া সহ নানা গ্রন্থের রচয়িতা এবং তিনি অতীশ দীপঙ্করের সাথে অভিসময় বিভঙ্গ রচনাও করেছিলেন।
যাইহোক যতদিন যাবে এইসব প্রাচীন সিদ্ধাচার্য সম্পর্কে আরো নতুন নতুন তথ্য দ্বারা আমরা সমৃদ্ধ হতে পারব এমনটাই আমাদের আশা।

Watch us on YouTube