আধুনিক কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (৩০ শে অক্টোবর, ১৯০১, মৃত্যু -: ২৫ শে জুন, ১৯৬০)। সুধীন্দ্রনাথ ছিলেন বহুভাষাবিদ পন্ডিত এবং মনস্বী। তাঁর কবি জীবনের সূচনা ঘটে ১৯২৫ খ্রি:। সুধীন্দ্রনাথের কবিতায় নাগরিক জীবনের জটিলতা, বিশ্বযুদ্ধজনিত শূণ্যতা, মূল্যবোধ সব কিছুই সুন্দর ভাবে লক্ষ্য করা যায়। তিনি ছিলেন যথার্থই একজন আধুনিক কবি।
কাব্যগ্রন্থগুলি হল – তন্বী (১৯৩০) অর্কেষ্ট্রা (১৯৩৫). ক্রন্দসী (১৯৩৭) উত্তর ফাল্গুনী (১৯৪০) সংবর্ত (১৯৫৩) দশমী (১৯৫৬) প্রতিষ্ঠান (১৯৫৪) প্রভৃতি।
সুধীন্দ্রনাথের প্রথম কাব্যগ্রন্থ হল -“তন্বী” যা প্রকাশিত হয় ১৯৩০। সুধীন্দ্রনাথ কিছু সনেট রচনা করেন যার কিছু তন্বী কাব্যে স্থান পায়। ১৯২৫ এ লেখা তিনটি সনেট এতে স্থান পায়।
অর্কেষ্ট্রা – এই পর্যায়ে সুধীন্দ্রনাথের কাব্যশক্তি পরিপূর্ণরুপে প্রকাশ পায়। অর্কেষ্ট্রা বিশ শতকের এক প্রাণবন্ত তরুণী। তিনি কালের অনিবার্যতার কথা শুনিয়েছেন বার বার। এই কাব্যের একটি কবিতা হল – “সর্বনাশ”, যেখানে তিনি মৃত্যুর উপর প্রেমকে স্থান দিয়েছেন। এই কাব্যের ওপর একটি বিখ্যাত কবিতা হল – “শাশ্বতী”। এটি একটি যথার্থ প্রেমের কবিতা। কবি এখানে ব্যক্তিপ্রেমের মধ্য দিয়ে বিশ্বপ্রেমের বীণা বাজিয়েছেন সচেতন ভাবে।
ক্রন্দসী – এটি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত -এর একটি অন্যতম বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। এটি কবি তার পরমবন্ধু হামফ্রে হাউস কে উৎসর্গ করেন। এই কাব্যের একটি বিখ্যাত কবিতা হল – “উটপাখি “। উটপাখি এখানে প্রতীক। মধ্যবিত্ত সমাজের প্রতিভূ। যে চোখ,কান ঢেকে মিথ্যা ছলনার আশ্রয় নিয়ে বসে আছে মরুভূমির বুকে। এলিয়টের কবিতার প্রভাব এখানে পরিলক্ষিত হয়। চিত্রকল্প ব্যবহারে কবি তার মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন।
সংবর্ত – এটি একটি স্বপ্নভঙ্গের কাব্য। একটি আদর্শের মৃত্যু ঘটেছে এই খানে।এইপর্বে কবি এগিয়ে যাওয়ার কথস বলেছেন।পুরাণের চিত্রকল্প কবি এখানে সচেতনভাবে প্রয়োগ ঘটিয়েছেন।
এই কাব্যের নাম কবিতায় কবি বিশ্বমানবিকতার যথার্থ রুপ তুলে ধরেছেন। এই কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৫৩ খ্রি:।
দশমী – এটি সুধীন্দ্রনাথের শেষ কাব্যগ্রন্থ। বাস্তবের ছবি এই কবিতায় স্পষ্ট ভাবে দেখানো হয়েছে। এই কাব্যের কয়েকটি কবিতা হল – “উপস্থাপন”,”অসঙ্গতি ” প্রভৃতি ।
কিছু অজানা তথ্য
রবীন্দ্রনাথ সুধীন্দ্রনাথকেই যথার্থ আধুনিক আখ্যা দেন তিনি বলেন – বাংলা সাহিত্যে তুমিই যথার্থ আধুনিক।
১৯২৫-১৯৪৫ অবধি তিনি বেশ কিছু সনেট লেখেন যা তন্বী ও অর্কেষ্ট্রা য় প্রকাশিত হয়।
অর্কেষ্ট্রায় সনেট গুলির বিষয় প্রেম।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর “আকাশপ্রদীপ ” কাব্যটি সুধীন্দ্রনাথকে উৎসর্গ করেন।
সুধীন্দ্রনাথের লেখা ‘কুক্কুট’ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথের খুব পছন্দ হয় এবং তাঁর নির্দেশে এটি প্রবাসী সাময়িক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।