বৃন্দাবনের ষড়গোস্বামী
গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজে গোস্বামী রঘুনাথ ভট্ট ,গোস্বামী রঘুনাথ দাস ,গোস্বামী গোপাল ভট্ট ,সনাতন গোস্বামী ,রূপ গোস্বামী ও জীব গোস্বামী –এই ছ’জনকে একত্রে ছয় গোঁসাই বা ষড়গোস্বামী বলা হয়। কৃষ্ণদাস কবিরাজ ‘শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত’ গ্রন্থে বলা আছে- “শ্রীরূপ সনাতন ভট্ট রঘুনাথ| / শ্রীজীব গোপাল ভট্ট দাস রঘুনাথ|| / এই ছয় গোসাঞ্চির কবি চরন বন্দন| / যাহা হইতে বিঘ্ন নাশ অভীষ্ট পূরণ।” এই পোস্টে বৃন্দাবনের সেই বিখ্যাত ছয় জন গোস্বামীর পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।
ষড়গোস্বামী পরিচয়
ষড়গোস্বামী -এর প্রথম পরিচয় পাই শ্রীনিবাস এর রচনায়।
“শ্রীরূপ সনাতন ভট্ট রঘুনাথ ।/শ্রীজীব গোপাল ভট্ট দাস রঘুনাথ ।।”
উদ্ধৃতিটির উৎস কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থ । জীব গোস্বামী সম্ভবত প্রত্যক্ষভাবে চৈতন্যদেবের সংস্পর্শে আসেন নি । ষড়গোস্বামী দের ভ্রাতৃদ্বয় হলেন রূপ গোস্বামী ও সনাতন গোস্বামী। জীব গোস্বামী এদের ভ্রাতুষ্পুত্র। রঘুনাথ দাস ছাড়া সকলেই ব্রাহ্মণ ছিলেন। বোধহয় রঘুনাথ দাস ছিলেন বাঙালি।
সনাতন ছিলেন রূপ গোস্বামীর অগ্রজ । ইনি ছিলেন সুলতান হুসেন শাহের “সাকর মল্লিক “। পিতা,-কুমার দেব, ঠাকুরদা -পদ্মনাভ । ১৪৮৯ সালে জন্ম গ্রহণ করেন । ১৫৫৮ সালে ইহলোক ত্যাগ করেন । ইনি চৈতন্য দেবের কাছে বৈষ্ণব ধর্মের দীক্ষা গ্রহণ করেন । সনাতন গোস্বামীর গ্রন্থ সমূহ : বৃহৎ ভাগবতামৃত ,দিগদর্শিনী, হরিভক্তিবিলাস,বৈষ্ণবতোষনী -ভাগবতের দশম স্কন্ধের টীকা ।
শ্রীজীব গোস্বামী রূপ গোস্বামীর নিকট বৈষ্ণব ধর্মের দীক্ষা গ্রহণ করেন। ১৫৫৮ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। গৌড়েশ্বর কবিকে অনুপম মল্লিক উপাধি দান করেন। শ্রীজীব গোস্বামীর গ্রন্থ সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য – গোপালচম্পু, সংকল্পকল্পদ্রুম, মাধব মহোৎসব ও গোপালবিরুদাবলী। তাঁর ব্যাকরণ রস শাস্ত্র : লোচন রচনী, দুর্গমসঙ্গমনী, রসামৃতশেষ, হরিনামামৃত ব্যাকরণ, সূত্রমালিকা। আর বৈষ্ণব স্মৃতি ও ধর্মতত্ত্ব বিষয়ক গ্রন্থগুলি হল ব্রহ্মসংহিতা ,গোপালতাপনী ,লঘুতোষনী, কৃষ্ণার্ঘদীপিকা, ক্রমসন্দর্ভ। শ্রীজীব গোস্বামীর বৈষ্ণব দর্শন বিষয়ক গ্রন্থ ভাগবত সন্দর্ভ বা ষট সন্দর্ভ ও সর্বসংবাদিনী।
আরও পড়ুন
চৈতন্যদেব দাক্ষিণাত্য ভ্রমন কালে গোপাল ভট্টের সঙ্গে পরিচয় হয় । গোপাল ভট্ট ১৫০০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৫৮৭ সালে তিনি মারা যান । তাঁর গুরুদেবের নাম প্রবোধানন্দ। কৃষ্ণকর্ণামৃত গ্রন্থের টীকা ‘কৃষ্ণবল্লভা’র রচয়িতা গোপাল ভট্ট ও এই গোপাল ভট্ট একি ব্যক্তি কিনা সে নিয়ে বিস্তর বিতর্ক রয়েছে । “হরিভক্তিবিলাস ‘নামক গ্রন্থের দায়িত্ব গোপাল ভট্টের উপর অর্পিত হলেও অনেকের ধারনা এর প্রকৃত রচয়িতা সনাতন গোস্বামী । পূর্ববঙ্গ ভ্রমণ কালে চৈতন্যদেবের প্রথম ভক্ত ছিলেন তপন মিশ্র।
রঘুনাথ ভট্ট ছিলেন তপন মিশ্রের পুত্র। নীলাচলে রঘুনাথ ভট্টের সহিত চৈতন্য দেবের সাক্ষাৎকার হয়। ইনি কোনো গ্রন্থ রচনা করেন নি।
রঘুনাথ দাস সাপ্তগ্রামের জনৈক কায়স্থ ভূম্যধিকারীর সন্তান ছিলেন। ইনি গৃহত্যাগ করে নীলাচলে মহাপ্রভুর সান্নিধ্যে কালাতিপাত করেন। তিনি ১৪৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। রঘুনাথ দাসের গ্রন্থ সমূহ হল বিলাপকুসুমাঞ্জলি, স্তবমালা, মুক্তাচরিত্র ও দানকেলী চিন্তামণি ।
গোস্বামী রঘুনাথ ভট্ট ছিলেন শ্রীচৈতন্যের প্রথম প্রত্যক্ষ শিষ্য তপন মিত্রের পুত্র|তিনি নির্লোভ, সংযমী ও সুকন্ঠের অধিকারী ছিলেন|তিনি শ্রীচৈতন্যকে ভাগবত পাঠ করে শোনাতেন, রান্না করে সেবা দিতেন| তাঁর নামে কোনো গ্রন্থ পাওয়া যায় না|