
কথাসাহিত্যিক ত্রৈলোক্যনাথ
ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় (১৮৪৭ – ১৯১৯) বঙ্কিম সমকালীন ঔপন্যাসিকদের মধ্যে ছিলেন অন্যতম। তিনি হাসির রাজা বলে পরিচিত। বিশ্বকোষ রচনাতেও আছে তাঁর কিছু অবদান। বাংলা সাহিত্যে এক উদ্ভট হাস্যরসের উদ্ভাবক ছিলেন ত্রৈলোক্যনাথ। আমাদের আলোচনায় উঠে এসেছে লেখক ও তাঁর নানা সৃষ্টি সম্পর্কিত তথ্য।
সাধারণ তথ্য – ত্রৈলোক্যনাথ
ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ২২শে জুলাই ১৮৪৭ খ্রিঃ উত্তর চব্বিশ পরগণার রাহুতায়। পিতার নাম বিশ্বম্ভর আর মাতার নাম ভবসুন্দরী দেবী। কটকে থাকাকালীন তিনি ‘উৎকল শুভকরী’ নামে একটি পত্রিকার সম্পাদনা করতেন। লেখনীতে তাঁর ভাষা ও ভাব সম্পূর্ণ তাঁর নিজস্ব। তাঁর লেখনী ছিল সহজ ও সরল। ত্রৈলোক্যনাথ সমাজের গোঁড়ামির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, রূপকথার সুন্দর ছবি তুলে ধরেছেন, সমাজ সমস্যাকে তুলে ধরেছেন। আবার ভয়ংকর পরিবেশ রচনাতেও সাবলীল থেকেছেন।
সাহিত্যকর্ম
উপন্যাস – কঙ্কাবতী (১৮৯২) ফোকলা দিগম্বর (১৯০১) মুক্তামালা (১৯০১) ময়না কোথায় (১৯০৪) পাপের পরিমান (১৯০৮)
ছোটোগল্প – ভূত ও মানুষ (১৮৯৬) মজার গল্প (১৯০৬) ডমরুচরিত (১৯২৩)
ইংরেজি গ্রন্থ – A HANDBOOK OF INDIAN PRODUCTS AND MATERIALS (1883), ART MANUFACTURES OF INDIA (1888), A VISIT TO EUROPE (1888)
প্রবন্ধ – ভারতে সুবর্ণ (১২৯৭ ব), ইস্পাত (১২৯৮ ব) বিড়াল (১২৯৮ ব) গজদন্ত (১২৯৯ ব) পাথুরে কয়লা (১২৯৯ ব) নূতন কথা (১৩০২ ব) ইত্যাদি।
মৃত্যুর পর প্রকাশিত গ্রন্থ – ডমরুচরিত (১৯২৩)।
অপ্রকাশিত রচনা – রূপসী হিরন্ময়ী (১৯২৩, জন্মভূমি পত্রিকা), আমার সেই অমূল্যমান (১৯২৮, জন্মভূমি)
গ্রন্থ পরিচয়
কঙ্কাবতী – ত্রৈলোক্যনাথের লেখা প্রথম উপন্যাস। রূপকথার জগতের ছবি এখানে ফুটে উঠেছে। সমাজ মানুষের উপর কীরূপ প্রভাব ফেলতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল উপন্যাসের বালিকা চরিত্র কঙ্কাবতী। এটি একটি ব্যঙ্গাত্মক উপন্যাস। উপন্যাসের প্রথম ভাগে আছে ১৫ টি পরিচ্ছেদ এবং দ্বিতীয় ভাগে আছে ১৯ টি পরিচ্ছেদ। একটি ‘পরিশেষ ‘ অংশ দেখা যায় উপন্যাসে । কঙ্কাবতী ও খেতুর প্রেম, বিবাহে বাধা এবং পরিশেষে মিলন।
ফোকলা দিগম্বর – সমগ্র উপন্যাসটি ৪টি ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগের পরিচ্ছেদ সংখ্যা ৮টি। দ্বিতীয় ভাগে মোট পরিচ্ছেদ সংখ্যা ৯টি। তৃতীয় ভাগে পরিচ্ছেদ সংখ্যা ১৫টি। শেষভাগে পরিচ্ছেদ সংখ্যা ১৪টি। উপন্যাসের চরিত্রগুলি হল রসময়, কুসী, মাসী, বাবু
ভূত ও মানুষ – এই গ্রন্থে মোট ৪টি গল্প আছে। গল্পগুলি জন্মভূমি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। গল্পগুলি হল – বাঙালা নিধিরাম, বীরবালা, লল্লু, নয়নচাঁদের ব্যবসা।
মুক্তামালা – ৭টি ভিন্ন ভিন্ন পরিচ্ছেদে ৭টি রজনীর কথা বলা হয়েছে। মহাদেব, হলধর, গড়গড়ি এই রচনার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি চরিত্র।
ডমরুচরিত – এই গ্রন্থের ৭ টি গল্প বঙ্গবাসী পত্রিকায় বিভিন্ন পূজা সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। ডমরু চরিত্রের মধ্য দিয়ে এই গল্পে প্রবাহিত হয়েছে নির্মল হাস্যরসের ধারা।