অন্যান্য সাহিত্যিক

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত – জীবন ও সাহিত্য

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত  বাংলা সাহিত্যের অন্যতম খ্যাতনামা শিল্পী। যাঁর লেখা ‘বেদে’ উপন্যাস পড়ে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন – “তোমার কল্পনার প্রশস্ত্রক্ষেত্র ও অজস্র বৈচিত্র্য দেখে আমি মনে মনে তোমার প্রশংসা করেছি” ‘শ্রীনীহারিকা দেবী’ ছদ্মনামে যাঁর সাহিত্য জীবন শুরু, কল্লোল যুগের অন্যতম সাহিত্যিক, তিনি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত। এই পোস্টে আমরা তাঁর সম্পর্কে নানা তথ্য নিয়ে আলোচনা করেছি। বাংলা সাহিত্যানুরাগীদের পছন্দ হলে আমাদের শ্রম সার্থক হবে।

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের জন্ম ১৯০৩ খ্রীঃ বাংলাদেশের নোয়াখালিতে। পিতা ছিলেন রামকুমার সেনগুপ্ত আর মাতা হেমলতা দেবী। মূলত আইনজীবী দাদা জিতেন্দ্র কুমারের উৎসাহে তিনি ইংরেজিতে এম.এ. পাশ করে আইন পরীক্ষাতেও সসম্মানে উত্তীর্ন হন। তিনি রামকৃষ্ণ দেবের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন।

সাহিত্য জীবন

বাংলা সাহিত্যে তাঁর আবির্ভাব ‘প্রবাসী’ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে। ১৩২৮ থেকে ১৩২৯পর্যন্ত ”শ্রীনীহারিকা দেবী” ছদ্মনামে ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রথম অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের বেশ কয়েকটি কবিতা বের হয়। ‘ভারতী’ পত্রিকায় স্বনামে ‘প্রতিপদের চাঁদ’ নামে একটি কবিতা প্রথম বের হয় ১৩২৯ সালের চৈত্র সংখ্যায়।

তাঁর প্রথম কাব্য ‘অমাবস্যা’, প্রথম উপন্যাস ‘বেদে’ (১৯২৮) এছাড়া প্রেমেন্দ্র মিত্রের সঙ্গে যুগ্মভাবে ‘বাঁকালেখা’ উপন্যাসটি ১৯২২ খ্রি: প্রকাশ করেন। লেখক তাঁর ‘কাকজ্যোৎস্না’ উপন্যাসটি স্ত্রী নীহারকণা দেবীকে উৎসর্গ করেন।

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত সাহিত্যকর্মের জন্য নানা সম্মানে ভূষিত হন। ‘উত্তরায়ণ’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ (১৩৮২) পান।এছাড়া ‘শরৎচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার’ ১৯৭৫ এবং মৃত্যুর কিছুদিন আগে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে মনোনীত হলে লেখক তা গ্রহণ করেননি।

লেখকের উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলি হলঃ ‘বেদে’ ‘আকস্মিক’ ‘ঊর্ননাভ’ ‘আসমুদ্র’ প্রভৃতি।

উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ গুলি হলঃ ‘টুটাফাটা’ ‘ইতি’ ‘অধিবাস’ ‘নায়ক নায়িকা’ ‘কালোরক্ত’ ‘প্রজাপতেয়’ ‘যতন বিবি’ ‘আসমান জমিন’ ‘চাষাভূষা’ ‘পলায়ন’ ‘মগের মলুক’ ‘স্বাদু স্বাদু পদে পদে’ প্রভৃতি।

তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগুলিঃ ‘আমরা’ ‘প্রিয়া ও পৃথিবী’ ‘নীল আকাশ’ প্রভৃতি

‘বেদে’ লেখকের প্রথম মৌলিক রচনা। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ উপন্যাসটির ভূয়সী প্রশংসা করেন। বেদে পড়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন – ”তোমার কল্পনার প্রশস্তক্ষেত্র ও অজস্র বৈচিত্র দেখে আমি মনে মনে তোমার প্রশংসা করেছি….”।

উল্লেখ্য, লেখকের ”বিবাহের চেয়ে বড়” ও ”প্রাচীন প্রান্তর” অশ্লীলতার দায়ের বাজেয়াপ্ত হয়।

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ছোটোবেলা থেকেই হাঁপানিতে ভুগতেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগে পর্যন্তও হাঁপানি যন্ত্রনা ভোগ করত হয় লেখককে। ১৯৭৬ খ্রীঃ ৭৩ বছর বয়সে কলকাতায় নিজের বাড়িতে তিনি দেহত্যাগ করেন।

আমাদের মক টেস্ট দিতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *