মালাধর বসু – ভাগবত অনুবাদক
অনুবাদ সাহিত্যের ধারায় মালাধর বসু ভাগবত অনুবাদ করে বিখ্যাত হয়েছেন। তিনি ভাগবতের দশম ও একাদশ স্কন্ধের অনুবাদ করেন। তাঁর কাব্যের নাম ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’। কাব্যটি ‘গোবিন্দবিজয়’ বা ‘গোবিন্দমঙ্গল’ নামেও পরিচিত। এই কাব্যে কবি নিজের পরিচয় দিয়ে লিখেছেন –
‘বাপ ভগীরথ মোর মা ইন্দুমতী।’
কিংবা
‘কায়স্থ কুলেতে জন্ম কুলীন গ্রামে বাস।’
এই ছত্রগুলি থেকে বোঝা যায়, মালাধর বসু -এর বাসভূমি কুলীন গ্রাম যা বর্তমান পূর্ব বর্ধমান জেলার অধীন। কবির পিতার নাম ভগীরথ, মাতার নাম ইন্দুমতী। কেদারনাথ দত্ত ভক্তিবিনোদ ১২৯৩ বঙ্গাব্দে কুলীন গ্রাম থেকে কবির বংশ তালিকা সংগ্রহ করেন।
তালিকাটি এরকম – দশরথ > কুশল > শুভঙ্কর > হংস > মুক্তিরাম > দামোদর > অনন্তরাম > গুণী নায়ক > মাধব > শ্রীপতি > কৃপারাম > ভগীরথ > মালাধর বসু।
এছাড়াও প্রমথনাথ ঘোষ ‘কবি গুণরাজ খাঁ বংশ’ প্রবন্ধে মালাধরের কুল পরিচয় তুলে ধরেন। কৃষ্ণদাস কবিরাজ তাঁর ‘চৈতন্যচরিতামৃত’ গ্রন্থে এবং জয়ানন্দ তাঁর ‘চৈতন্যমঙ্গলে’ মালাধর বসুর কথা উল্লেখ করেছেন।
কবি মালাধর কাব্য রচনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে লিখেছেন –
‘ভাগবত অর্থ যত পয়ারে বান্ধিয়া।
লোক নিস্তারিতে করি পাঁচালি রচিয়া।।’
কবি তাঁর কাব্য রচনা করেছেন ব্যাসের স্বপ্নাদেশ পেয়ে –
‘স্বপ্নে আদেশ দিলেন প্রভু ব্যাস।
তাঁর আজ্ঞামতে গ্রন্থ করিনু রচন।।’
মালাধরের ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ কাব্যের রচনা শুরু হয় ১৩৯৫ শকে বা ১৪৭৩ খ্রিস্টাব্দে এবং কাব্য রচনা সমাপ্ত হয় ১৪০২ শকে বা ১৪৮০ খ্রিস্টাব্দে। কবি লিখেছেন –
‘তের শ পচানই শকে গ্রন্থ আরম্ভণ।
চতুর্দশ দুই শকে হৈল সমাপন।।’
উপাধি
কবির উপাধি গুণরাজ খান। এই উপাধি কে দিয়েছিলেন তা নিয়ে মতবিরোধ আছে। ড. সুকুমার সেনের মতে কবিকে গুণরাজ খান উপাধি দিয়েছিলেন রুক্নুদ্দিন বরবক শাহ কিন্তু দীনেশচন্দ্র সেনের মতে কবিকে এই উপাধি শামসুদ্দিন ইউসুফ শাহ দিয়েছিলেন।
কাব্যের প্রকাশ
১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে রাধিকানাথ দত্তের সম্পাদনায় মালাধর বসুর শ্রীকৃষ্ণবিজয় প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটির পরবর্তী সংস্করণ প্রকাশ পায় ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে নন্দলাল বিদ্যাসাগরের সম্পাদনায়। এছাড়া খগেন্দ্রনাথ মিত্রের সম্পাদনায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রন্থটির আরও একটি সংস্করণ প্রকাশ পায় ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে।
কাব্যের বৈশিষ্ট্য
‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ ‘বর্ণনাময় গেয় কাব্য।’ এই কাব্যে অনেক রাগ-রাগিণীর উল্লেখ পাওয়া যায়। ড. সুকুমার সেন এই কাব্যকে ভাগবতের অনুবাদ না বলে ‘ভাগবতের অনুসারী’ বলতে চেয়েছেন। কাব্যে শ্রীকৃষ্ণের তিনটি লীলা বর্ণিত হয়েছে – বৃন্দাবন লীলা, মথুরা লীলা ও দ্বারকা লীলা। এই কাব্যে মধুর রসের পরিবর্তে বাৎসল্য রসের প্রাধান্য ঘটেছে।
নিয়মিত ভিডিও টিউটোরিয়াল, মক টেস্ট ও পিডিএফ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল প্রয়াস ।