পাঁচমিশালী

ভাষা পাঠদান – নানা পদ্ধতি

শ্রেণীকক্ষে ভাষা পাঠদান -এ আমরা বিভিন্ন প্রকার পদ্ধতির প্রয়োগ করতে পারি। ব্যবহার করতে পারি নানা রকম শিক্ষণ কৌশল। আমাদের এই আলোচনায় ভাষা পাঠদান -এর সেই সমস্ত নানা পদ্ধতি নিয়ে কিছু আলোচনা করা হয়েছে। এই প্রচ্ছদে আপনারা পাবেন ভাষা পাঠদান – নানা পদ্ধতি র সংক্ষিপ্ত অথচ সার্বিক একটি আলোচনা যেমন বিবৃতিমূলক কৌশল, বর্ণণ, ব্যাখ্যান, প্রশ্নন, মূর্তন সম্পর্কে ধারণা।

ভাষা পাঠদান – নানা পদ্ধতি

১. বিবৃতি মূলক কৌশল

শ্রোতা অর্থাৎ শ্রেণীকক্ষের ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে কোন ঘটনার সম্পূর্ণ অংশকে ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করার রীতিই হল বিবৃতি, যাকে ইংরেজিতে বলা যায় Narration। এই রীতিতে বক্তব্য বিষয়ের অনেকখানি ছাত্রছাত্রীরা উপলব্ধি করতে পারে। এই রীতিকে যদি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যায় তাহলে শিক্ষার্থীর মনোলোকে উক্ত বিষয়ে একটি ইমেজ বা কল্পনার সৃষ্টি হয়। শুধু তাই না, আদর্শ বিবৃতি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে একটি সুন্দর সম্পর্ক স্থাপনেও সক্ষম। কিন্তু কেমন হওয়া উচিৎ আদর্শ বিবৃতি ?

ক] বিবৃতির মধ্যে থাকবে স্পষ্টতা

খ] যথাযথ ভাবভঙ্গি প্রয়োগ করা দরকার এক্ষেত্রে

গ] বিবৃতির সময় খেয়াল রাখতে হবে তা যেন একঘেয়ে না হয়ে যায়। তাতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

ঘ] যথাযথ শব্দ প্রয়োগ এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সঠিক ধারণা থাকা দরকার।

ঙ] বিবৃতি প্রদানকালে বক্তব্য বিষয় যেন যুক্তিনির্ভর হয়।

 

২. ব্যাখ্যান মূলক কৌশল

ছাত্রছাত্রীদের কোন বিষয়কে সঠিকভাবে আত্মস্থ করানোর জন্য এই পদ্ধতির প্রয়োগ করতে হয়। ধীরে ধীরে ব্যাখ্যার মধ্য দিয়ে বক্তব্য বিষয়কে ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নাম ব্যাখ্যান, যাকে ইংরেজিতে বলা যায় Explanation। এই পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হয়ে ওঠে। তাছাড়া পাঠ্যপুস্তকের গভীরে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পুরো বিষয়টি বুঝতেও সহায়ক হয়ে ওঠে যথাযথ ব্যাখ্যান।

কেমন হওয়া উচিৎ আদর্শ ব্যাখ্যান ?

ক] এই কৌশল প্রয়োগ করার সময় ভাষা হতে হবে সহজ সরল, যাতে ব্যাখ্যাত বিষয় শিক্ষার্থীরা সহজে বুঝতে পারে।

খ] ব্যাখ্যানের সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে বক্তব্য বিষয়ভিত্তিক হয়, কোন অপ্রাসঙ্গিক বা অতিরিক্ত বক্তব্য যে না থাকে

গ] শিক্ষার্থীদের পূর্বজ্ঞানের ভিত্তিতে হবে ব্যাখ্যান

ঘ] ব্যাখ্যানকালে অল্পবিস্তর প্রশ্ন করা উচিৎ

ঙ] এই রীতি প্রয়োগের সময় শিক্ষার্থীদের কোন বক্তব্য থাকলে তা শোনা প্রয়োজন। যদি তাদের কোন বক্তব্য ব্যাখ্যাত বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয় বা অপ্রাসঙ্গিক হয় তাহলে তা কেন অপ্রাসঙ্গিক তা ছাত্রছাত্রীদের বুঝিয়ে দিতে হয়।

 

৩. বর্ণণ মূলক কৌশল

আপাতভাবে বিবৃতি আর বর্ণণ প্রায় সমতুল্য মনে হলেও দুইয়ের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। বর্ণণ বা Description পদ্ধতিটি অনেক গভীর ও বিস্তৃত। এর মধ্যে থাকে বিবরণের সূক্ষ্মতা। অন্যদিকে বিবৃতির বর্ণণা কিছুটা স্থূল। ভাষাশিক্ষায় এই পদ্ধতিটি খুবই প্রয়োজন। বর্ণণ পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে কল্পনাশক্তির জাগরণ ঘটায় এবং পাঠের প্রতি মনোযোগী হতে সাহায্য করে।

কেমন হওয়া উচিৎ আদর্শ বর্ণণ ?

ক] সহজ সরলভাবে বর্ণণ পদ্ধতির প্রয়োগ করতে হবে।

খ] শব্দ প্রয়োগে নজর রাখতে হবে

গ] এমনভাবে এই পদ্ধতির ব্যবহার করতে হবে যাতে তা ছাত্রছাত্রীদের হৃদয়গ্রাহী হয়ে ওঠে।

ঘ] যথাযথ ও প্রাসঙ্গিক বিষয়েই বর্ণণ পদ্ধতির প্রয়োগ করা উচিৎ

ঙ] বর্ণণের সময় বক্তব্য বিষয় প্রকাশকালে অধিক ভাবাবেগ থাকা চলবে না।

 

৪. মূর্তন কৌশল

ভাষা শিক্ষাদানে অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক ও মনোগ্রাহী একটি কৌশল এই মূর্তন। নানা ছবি, মানচিত্র, মডেল বা স্কেচ কিংবা কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, প্রাসঙ্গিক তুলনামূলক কোন কাহিনী পরিবেশন ইত্যাদির ব্যবহারে পাঠকে ছাত্রছাত্রীদের কাছে হৃদয়গ্রাহী করে তোলার এক অন্যতম পদ্ধতি এই মূর্তন যাকে ইংরেজিতে বলা যায় Illustration। শ্রেণীকক্ষে এই পদ্ধতিটি শিক্ষার্থীদের মনোযোগকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করতে সক্ষম। শিক্ষার্থীদের কল্পনালোকে বিষয়ভিত্তিক ইমেজ তৈরীতে সক্ষম এই পদ্ধতি। তাছাড়া ছাত্রছাত্রীদের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও বিষয়ভিত্তিক একটি স্পষ্ট ধারণাও দিতে পারে এই মূর্তন কৌশল।

কেমন হওয়া উচিৎ আদর্শ মূর্তন কৌশল ?

ক] ভাষা নির্বাচনে সচেতন থাকতে হবে

খ] এই পদ্ধতি প্রয়োগের সময় নজর রাখতে হবে শব্দ প্রয়োগের প্রতি। কোন প্রকার কঠিন শব্দ নয়, সহজ সরল শব্দের প্রয়োগ করা দরকার।

গ] যেসমস্ত ছবি, স্কেচ ব্যবহার করা হবে তা যেন সংশ্লিষ্ট পাঠ উপযোগী হয়।

ঘ] সঠিক সময়ে সঠিক মূর্তন প্রয়োগ করা প্রয়োজন

ঙ] মূর্তনে কোন ত্রুটি না থাকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

 

৫. প্রশ্নকরণ কৌশল

ভাষা পাঠদান -এ প্রশ্নকরণ এমন একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রয়োজনীয় উদ্দীপনার সঞ্চার করে। মনোবিজ্ঞানে এই উদ্দীপনার বিশেষ গুরুত্ব আছে। এই উদ্দীপনা দুইভাবে সৃষ্টি হয় – একটি বাইরের অন্যটি অন্তরের। শ্রেণীকক্ষে শিক্ষক শিক্ষিকার প্রশ্ন বহিরুদ্দীপকের কাজ করে আর শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন অন্তর উদ্দীপকের কাজ করে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর যে অন্তরের চাহিদা থাকে তা এই পদ্ধতিতে প্রকাশমান হয়। এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের মনের কৌতূহল মেটাতে সক্ষম। শিক্ষকের প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের চিন্তন প্রক্রিয়াকে বাড়িয়ে তোলে এবং তাদের সৃজনশীল হতে সাহায্য করে।

কেমন হওয়া উচিৎ আদর্শ প্রশ্নকরণ কৌশল  ?

ক] এই পদ্ধতি প্রয়োগের সময় নজর রাখতে হবে প্রশ্নের ভাষা যেন স্পষ্ট হয়। শিক্ষার্থীদের তা বুঝতে যেন কোন সমস্যা না হয় সেজন্য প্রশ্নের ভাষা হবে সহজ সরল। প্রশ্ন দীর্ঘ হলে চলবে না।

খ] শিক্ষার্থীদের চিন্তন প্রক্রিয়া বাড়িয়ে তোলার জন্য প্রশ্ন হবে চিন্তা সাপেক্ষ।

গ] যে বিষয়ে পাঠ দেওয়া হচ্ছে প্রশ্ন হবে সেই পাঠকেন্দ্রিক

ঘ] একটি প্রশ্ন করার পর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উত্তর এলে তবেই পরের প্রশ্ন করতে হবে।

ঙ] এই পদ্ধতি প্রয়োগের সময় প্রশ্নের সংখ্যা সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। খুব বেশিও না, আবার খুব কমও না।

আলোচক – Nilratan Chatterjee, Editor, SSC Target – SLST Bengali by progressive Publisher (Kolkata)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *