পত্র লিখন – বিস্তারিত আলোচনা
পত্র লিখন – বিস্তারিত আলোচনা শীর্ষক এই পোস্টে আমরা পত্র লিখন পদ্ধতি, পত্রের শ্রেণি, তার গঠনভঙ্গি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করব। মানুষকে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কিংবা সামাজিক ও ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় পত্র লিখতে হয়। যদিও বর্তমান ডিজিটাল দুনিয়ায়, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ব্যক্তিগত পত্র লেখার প্রচলন প্রায় নেই। আজ আর ডাকপিওন এসে বাড়িতে আমাদের কোনো আত্মীয়, বন্ধুর চিঠি বাড়িতে পৌঁছতে আসে না।
কিন্তু আমাদের নানা ক্ষেত্রে পত্র লিখতেই হয়। তা হতে পারে ব্যবহারিক (অফিসিয়াল) কিংবা সামাজিক। এখন আমাদের এই সমস্ত চিঠি লেখার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় পত্র লিখন বিষয়ে দক্ষতা যাচাইয়ে প্রশ্ন আসে। আমরা কিছু আদর্শ পত্র লিখন -এর উদাহরণ দেওয়ার পূর্বে পত্রের নানা শ্রেণি এবং সেই সমস্ত পত্র লেখার নিয়মগুলি জেনে নেব। প্রতিবেদন রচনা সম্পর্কে দেখুন। আমাদের ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল প্রয়াস সাবস্ক্রাইব করে নিন।
পত্র লিখন – পত্রের শ্রেণিবিন্যাস
১. ব্যক্তিগত পত্র – এই ধরনের পত্র পিতা-মাতা, বন্ধু-বান্ধব কিংবা আত্মীয়স্বজনকে লেখা হয়। ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিক সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা অথবা কুশল সংবাদ জানানো হয় এই প্রকার পত্র দ্বারা।
২. ব্যবহারিক পত্র – এই ধরনের পত্র হল মূলত অফিসিয়াল লেটার। অফিসে ছুটির আবেদন, কর্তৃপক্ষের কাছে নানা বিষয়ে পত্র, চাকরির আবেদন কিংবা সম্পাদকের কাছে এই ধরনের পত্র লেখা হয়।
৩. সামাজিক পত্র – সামাজিক কিংবা পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান অথবা উৎসব উপলক্ষ্যে কাউকে আমন্ত্রণ করতে এই প্রকার পত্র লেখা হয়।
৪. ব্যবসায়িক পত্র – ব্যবসার প্রয়োজনে এই প্রকার পত্র লেখা হয়।
তবে পরীক্ষায় প্রথম দুই প্রকারের পত্র লিখতে দেওয়া হয়। তাই আমরা ঐ দুই প্রকার পত্র নিয়েই আলোচনা করব।
পত্র লিখন – নিয়ম
১. প্রত্যেক প্রকার পত্রের নিজস্ব গঠনভঙ্গি আছে। যে প্রকার পত্র লেখা হচ্ছে তার নিজস্ব আঙ্গিকটি অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে।
২. যেকোনো পত্র লেখার সময় সহজ-সরল ভাষায় ভাবটি স্পষ্টভাবে ব্যক্ত হবে।
৩. লেখার সময় সাধু ভাষা অথবা চলিত ভাষার একটি ব্যবহার করতে হবে। উভয়ের সংমিশ্রণ একেবারেই গ্রাহ্য হবে না। ৪. পত্র হবে পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন। লেখায় কোথাও কাটাকুটি চলে না।
পত্রের গঠনভঙ্গি
১. ব্যক্তিগত পত্রঃ
এই প্রকার পত্রের মূল দুটি অংশ – বাইরের অংশ ও ভিতরের অংশ। বাইরের অংশে পত্রের প্রেরক ও প্রাপকের নাম-ঠিকানা থাকে। অনেক ক্ষেত্রে এই দুটির সঙ্গে ডাকটিকিটও থাকতে পারে।
পরীক্ষায় পত্র লিখনে মূল বিষয়টি হল পত্রের ভিতরের অংশটি। আমরা ব্যক্তিগত পত্রের ভিতরের অংশকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করতে পারি। যেমন –
ক. প্রেরকের ঠিকানা ও পত্র লেখার দিনাঙ্ক বা তারিখ – পত্রের শুরুতেই উপরের ডানদিকে এই অংশটি থাকে। পরীক্ষায় প্রেরকের ঠিকানার পরিবর্তে X,Y,Z লিখতে বলা হয়।
খ. সম্বোধন- যাকে পত্র লেখা হচ্ছে তার উদ্দেশ্যে কিছু সম্বোধন করতে হয়। বয়স অনুসারে সম্বোধনসূচক শব্দ ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন গুরুজনদের ক্ষেত্রে শ্রীচরণেষু, পূজনীয় বা পূজনীয়া, পূজনীয়েসু বা পূজনীয়াসু, শ্রদ্ধাস্পদেষু, শ্রীচরণকমলেষু, ইত্যাদি। বয়সে ছোটো হলে সম্বোধন হয় কল্যাণীয়েসু বা কল্যাণীয়াসু, স্নেহাস্পদেসু, কল্যাণীয় বা কল্যাণীয়া ইত্যাদি। আর প্রাপক যদি সমবয়সী হয় তাহলে পত্রের সম্বোধনসূচক শব্দ হয় প্রিয়, প্রিয়বরেষু, প্রিয়বন্ধু বা প্রিয়বান্ধবী, বন্ধুবরেষু, প্রীতিভাজনেষু ইত্যাদি।
গ. মূল বক্তব্য – পত্র লিখনের মূল অংশ। এই অংশটি একটি বা দুটি অনুচ্ছেদে লেখা হয়।
ঘ. বিদায় সম্ভাষণ – মূল বক্তব্য শেষে একটি পৃথক অনুচ্ছেদে এই অংশটি থাকে। গুরুজনদের প্রণাম, ছোটোদের স্নেহ, আশীর্বাদ এবং সমবয়সীদের শুভেচ্ছা কিংবা ভালবাসা জানানো হয় এই অংশে।
ঙ. নাম-স্বাক্ষর – পত্রের নীচে ডানদিকে এই অংশটি থাকে। এখানে প্রেরকের নাম লিখতে হয়। নাম লেখার পূর্বে ‘ইতি’ শব্দটি লিখে সমাপ্তিসূচক বাক্যাংশ যেমন ‘তোমার স্নেহের’, ‘আশীর্বাদক’, ‘তোমার’ ব্যবহার হয়। পরীক্ষায় নামের পরিবর্তে X,Y,Z লিখতে বলা হয়। ব্যক্তিগত পত্রের ভিতরের অংশের গঠনভঙ্গিটি বুঝতে নীচের চিত্রটি দেখুন –
২. ব্যবহারিক পত্রঃ
পত্র লিখন – বিস্তারিত আলোচনা তে এরপর আমরা দেখে নেব ব্যবহারিক পত্রের বিষয়ে। এই প্রকার পত্রের ছয়টি অংশ থাকে। যেমন –
ক. বিষয় – কোন্ বিষয়ে পত্র লেখা হচ্ছে তা উল্লেখ করতে হয় এই অংশে। প্রশ্নপত্রে উল্লেখিত বিষয়ের শিরোনাম হিসেবে এই অংশটি ব্যবহৃত হয়। তবে
খ. পত্র লিখনের তারিখ – পত্রের উপরে ডানদিকে পত্র লেখার তারিখটি দিতে হবে।
গ. প্রাপকের ঠিকানা সহ সম্বোধন – যাকে পত্রটি লেখা হচ্ছে তার উদ্দেশ্যে সম্বোধন করে তার পুরো ঠিকানাটি লিখতে হবে।
ঘ. পত্রের বিষয় – এই অংশটিকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি।
১. সূচনা – এই অংশে থাকে পত্রের বিষয়।
২. মূল বক্তব্য – ব্যক্তিগত পত্রের মতো এই পত্রেও অংশটি গুরুত্বপূর্ণ। পত্রে বক্তব্যের মূল বিষয়টি এখানে উপস্থাপিত করা হয়।
৩. সমাপ্তি অংশ – কর্তৃপক্ষ বা জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সমাধানের উপায় অথবা প্রতিকারের পথ পরিবেশিত হয়।
ঙ. নাম-স্বাক্ষর – পত্রের নীচে ডানদিকে নাম লিখতে হয়। নামের পূর্বে ‘বিনীত’ বা ‘বিনীতা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
চ. প্রেরকের ঠিকানা – পত্রের নীচে বামদিকে পত্র প্রেরকের ঠিকানা সংক্ষেপে লিখতে হয়। পরীক্ষায় ঠিকানার পরিবর্তে X, Y, Z লিখতে বলা হয়।
মনে রাখুন, ‘ক’ (বিষয়) অংশটি ‘গ’ (প্রাপকের ঠিকানা সহ সম্বোধন) অংশের পরেও লেখা যায়।
ব্যবহারিক পত্রের গঠনভঙ্গিটি বুঝতে নীচের চিত্রটি দেখুন –
আদর্শ পত্রের কিছু উদাহরণ
১. আমফান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের কীভাবে সহায়তা করেছেন এ বিষয়ে মাকে একটি পত্র লিখুন। [নিজের নাম ঠিকানার পরিবর্তে X, Y, Z লিখুন]
ঠিকানা – X
২৬ মে, ২০২০
শ্রীচরণেষু মা,
অনেকদিন হল তোমাদের কোনো খবর পাইনি। তোমরা কেমন আছ ? আমিও নানা ব্যস্ততার কারণে তোমাদের চিঠি লিখতে পারিনি। আসলে আমফানে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। আজ অবসর পেয়ে তোমায় চিঠি লিখতে বসলাম।
তুমি শুনে খুশি হবে, আমি দিন পনেরো আগে ‘নো টিয়ার্স’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য হয়েছি। এই সংস্থা বিগত বেশ কিছু বছর নানা প্রতিকূলতায় অসহায়, দুঃখী মানুষের সেবা করে আসছে। আমি তাদের অঙ্গ হতে পেরে গর্বিত। আমফানের পর ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সেবায় আমরা তাই চার দিন ধরে হুগলি জেলার পাণ্ডুয়ার কাছাকাছি বিভিন্ন এলাকা পরিভ্রমণ করি এবং যথাসাধ্য সহায়তার চেষ্টা করি। আমরা ঐ সব মানুষদের শুকনো খাবার, কিছু পোশাক আর ত্রিপল দিয়ে সাহায্য করি। মানুষের কী করুণ অবস্থা, কী দুর্দশা চোখে না দেখলে জানতে পারতাম না। অন্তত কিছু মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি এটা ভেবে ভালো লাগছে আমার।
আমি ভালো আছি। তোমরা সপরিবারে কেমন আছ জানাবে। তুমি আর বাবা আমার প্রণাম নিও। বোনকে আমার স্নেহ, ভালবাসা দিও।
ইতি–
তোমার স্নেহের
Y