কবি জীবনানন্দ দাশ এর কাব্যজগত
রবীন্দ্রপরবর্তী বাংলা কবিতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হলেন কবি জীবনানন্দ দাশ (১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৯ – ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪)। কবি জীবনানন্দ জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের বরিশালে,পরবর্তীতে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরাজি তে স্নাতক হিসাবে উত্তীর্ণ হন। জীবনানন্দের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯১৯ এ বৈশাখ সংখ্যায় “ব্রহ্মবাদী” সাময়িক পত্রিকায়। জীবনানন্দের প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯২৭ এ “ঝরাপালক।” এই পোস্টে কবি জীবনানন্দ দাশের কাব্য পরিচিতি আলোচিত হয়েছে।
কাব্য পরিচিতি
ঝরাপালকঃ এটি জীবনানন্দের প্রথম কাব্যগ্রন্থ। এটি প্রকাশিত হয় ১৯২৭ এ, বাংলা ১৩৩৪ বঙ্গাব্দে।এর কিছু উল্লেখযোগ্য কবিতা হল- “নীলিমা”, “পিরামিড”, “সেদিন এধরনীর” প্রভৃতি। রবীন্দ্রনাথের প্রভাব এতে পরিলক্ষিত হয়।
ধূসর পান্ডুলিপিঃ ধূসর পান্ডুলিপি প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ এ, বাংলা ১৩৪৩ এর অগ্রহায়ণ এ। “প্রগতি”,”ধূপছায়া”,”কল্লোল ” প্রভৃতি পত্রিকায় এর কবিতা গুলি প্রকাশিত হয়। ১৩৩২-১৩৩৬ সালের মধ্যে লেখা কবিতা গুলি এতে স্থান পায়।সময়,মৃত্যু এবং নিসর্গ প্রীতি এই কবিতায় ধরা পড়েছে। এই কাব্যের কিছু উল্লেখযোগ্য কবিতা হল – “মৃত্যুর আগে”, “পাখিরা”,”বোধ” প্রভৃতি।
জীবনানন্দ এই কাব্যগ্রন্থ বুদ্ধদেব বসুকে উৎসর্গ করেন।
বনলতা সেনঃ ১৯৪২ খ্রি: এ “এক পয়সার একটি ” গ্রন্থমালার অন্তর্ভুক্ত হয়ে জীবনানন্দের সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ বনলতা সেন প্রকাশিত হয়।এটি মূলত প্রেমের কাব্য।সুচেতনা এখানে প্রেমিকা।
এই কাব্যের একটি উল্লেখযোগ্য কবিতা হল – সুচেতনা,নগ্ন নির্জন হাত,বনলতা সেন প্রভৃতি। বনলতা এই কাব্যের ৫৩ সংখ্যক কবিতা।
মহাপৃথিবীঃ এই কাব্যের কবিতাগুলি ১৩৩৬-১৩৪৮ এর মধ্যে লেখা। বিভিন্ন সাময়িকপত্রে এগুলি ১৩৪২-১৩৫০ এর মধ্যে প্রকাশিত হয়। এই কাব্যের কয়েকটি বিখ্যাত কবিতা হল – “আট বছর আগের একদিন “-এটি কবিতা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
“হায় চিল” এটিও কবিতা পত্রিকায় ১৩৪২ বঙ্গাব্দে চৈত্র সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।এছাড়াও “হাওয়ার রাত”, “শিকার” প্রভৃতি এই কাব্যের উল্লেখযোগ্য কবিতা।
সাতটি তারার তিমিরঃ এই কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ খ্রি:।এই কাব্যের কিছু উল্লেখযোগ্য কবিতা হল – “রাত্রি”,”তিমির হননের গান”(১৩৫০ এ কবিতা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।), “সমারুঢ়” প্রভৃতি।
রূপসী বাংলা গ্রাম বাংলার বাংলার সংস্কৃতি,ইতিহাস,প্রকৃতিক সৌন্দর্য এক সার্থক কাব্যিক রুপায়ণ হল রুপসী বাংলা কাব্য।এই কবিতার উল্লেখযোগ্য কবিতা “বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি”।কবির মত্যুর পর প্রকাশিত হয় এই কাব্য।কবিতা গুলি সনেটের আকারে লেখা।
বেলা অবেলা কালবেলা বিশ্বযুদ্ধজনিত সমস্যা সাধারণ মানুষের জীবনে যে পরিবর্তন এনে দিয়েছিল তার পরিচয় পাওয়া যায় এই কাব্যে। এটি প্রকাশিত হয় ১৯৬১ খ্রি:। এই কাব্যের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কবিতা হল – “১৯৪৬-৪৭” (এই কবিতার মূলে আছে অন্ধকার।রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সমস্যা, মূল্যবোধের অবক্ষয় এই কবিতায় আলোচিত হয়েছে। এই কাব্য গ্রন্থের অপর একটি কবিতা হল -“মানুষের মৃত্যু হলে “”।
কিছু টুকরো তথ্য
- জীবনানন্দ রবীন্দ্রোত্তর আধুনিক কবিদের মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।
- “জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতার ” প্রকাশিত হয় ১৯৫৪ সালেএবং তা আকাডেমি পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়।।
- তিনি ২ টি উপন্যাসও রচনা করেন “সুতীর্থ”(১৯৪৮) এবং “মাল্যবান “(১৯৪৮)।
- ১৯৩১ – ১৯৩৬ এর মধ্যে তিনি কিছু গল্প ও লেখেন।
- ১৯৩৮ সালে কবিতা পত্রিকায় তিনি “কবিতার কথা” নামে একটি প্রবন্ধ লেখেন।
- জীবনানন্দের “বোধ” কবিতায় T.S. Eliot এর কবি ভাবনার প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়।
জীবনানন্দের প্রথম দিককার কবিতা গুলি হল – “দেশবন্ধুর প্রয়াণে “, “ভারতবর্ষ”” বিবেকানন্দ’ প্রভৃতি।
রবীন্দ্রনাথের পর বাঙালি পাঠক সব থেকে বেশি আকর্ষিত হয়েছেন জীবনানন্দের কবিতার উপর। তার কবিতায় মৃত্যু ও জীবনের সহবস্থান লক্ষ্য করা যায়। তাঁর কবিতার মূলে আছে রোমাণ্টিকতা। প্রকৃতি চেতনা, প্রেম চেতনা, ইতিহাস চেতনার সমন্বয় লক্ষ্য করা যায় জীবনানন্দের কবিতায় ।